যৌনসম্পর্ক এক ধরনের মানসিক ও শারীরিক অভিজ্ঞতা, যা অনেক সময় যেন একটি গাইডবুক ছাড়া বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।
একজন পুরুষ যা পছন্দ করেন, অন্য কেউ তা একেবারেই পছন্দ নাও করতে পারেন। তাই সঠিক বোঝাপড়া ও সংযোগ তৈরি করাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয়।
Table of Contents
Toggleএকজন পুরুষ হিসেবে, আপনার উচিত এমন সব কাজ করা যা আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়—কারণ এরই ওপর নির্ভর করে যৌন স্বাস্থ্যের মান।
যেমন:
- চাপ কমানো
- সঠিক খাওয়া-দাওয়া
- নিয়মিত ব্যায়াম
- এবং ধূমপান বা অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলা
এই অভ্যাসগুলো আপনাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে, আবার মানসিকভাবে আপনাকে তৈরি করে আরও আত্মবিশ্বাসী পুরুষ হয়ে উঠতে।
এই আত্মবিশ্বাস আপনার যৌন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
যখন আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন, তখন আপনি শারীরিক দিকেও মনোযোগ দিতে পারেন—এবং দুজনেই তৃপ্ত হতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর যৌনজীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক
যৌনতা কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়—এটা একান্তভাবে আপনি ও আপনার স্ত্রীর মাঝকার বোঝাপড়া ও সংযোগের বিষয়।
কে কী পছন্দ করে, কীভাবে একে অপরের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া যায়—এই বিষয়গুলো ধীরে ধীরে শেখার মধ্যেই রয়েছে আসল আনন্দ।
এখানে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করা হলো যা আপনার যৌন জীবনকে আরও তৃপ্তিদায়ক করে তুলতে পারে।
ফোরপ্লে বুঝে নেওয়া ও গুরুত্ব দেওয়া
অনেক সময় একজন সঙ্গী যৌন সম্পর্কে আগ্রহ দেখান না, কারণ হয়তো আপনি সঠিক কথা বলছেন, কিন্তু ভঙ্গি বা দৃষ্টিভঙ্গি ভুল।
ফোরপ্লে মানে কেবল শারীরিক প্রস্তুতি নয়, বরং মানসিক টান ও চাওয়া প্রকাশ করা।
আপনার স্ত্রীর কাছে এভাবে বোঝান যে আপনি কেবল যৌনতা চান না, আপনি তাঁর সঙ্গে এই মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে চান।
এই মানসিক স্পর্শই সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়।
হস্তমৈথুন নিয়ে ভুল ধারণা ও বাস্তবতা
অনেকে মনে করেন, সম্পর্কের মধ্যে থাকলে হস্তমৈথুন করা উচিত নয়। কিন্তু এটি একটি প্রাকৃতিক বিষয়—এতে শরীর থেকে কিছু স্ট্রেস-হ্রাসকারী হরমোন নিঃসরণ হয়, যা মানুষকে ভালো অনুভব করায়।
সবকিছুর আগে, স্ত্রীর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন—সে কীভাবে দেখছে বিষয়টিকে।
অনেক দম্পতি পারস্পরিক সম্মতিতে একে অপরের সামনে হস্তমৈথুন করে, যা:
- একে অপরের আরাম ও অনুভূতির জায়গা বুঝতে সাহায্য করে
- এবং বিষয়টিকে লজ্জাজনক কিছু নয়, বরং স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে গ্রহণ করতে শেখায়
ভুল ধারণাগুলোর মধ্যে রয়েছে—
হস্তমৈথুন করলে শক্তি কমে যায়
লিঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ে
অধিক হস্তমৈথুন করলে ক্ষতি হয়
বাস্তবতা হলো: যদি আপনি অত্যাধিক করে ফেলেন, তখন ত্বকে অস্বস্তি বা ঘষা লাগা দেখা দিতে পারে।
তবে দৈনন্দিন জীবনে যদি এর প্রভাব পড়ে—যেমন কাজ, ঘুম বা সম্পর্ক নষ্ট হয়—তাহলে এটা আরও গভীর মানসিক বিষয় হতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
“বিঃদ্রঃ ডাক্তারগন এমন বললেও এটা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম, এবং এতে পেনিসের আকার নস্ট হয়ে যায়, পশ্চিমা এজেন্ট বাস্তবায়নের জন্য ডাক্তাররা এমন বুলি উড়ায়”
স্বাস্থ্যকর যৌনজীবনে যেসব বিষয় এড়িয়ে চলা উচিত
যৌনসম্পর্কে যেমন কিছু করণীয় আছে, তেমনই কিছু “না করা উচিত” এমন কাজও রয়েছে, যেগুলো সহজ হলেও বাস্তবে অনেকে মানেন না।
কিন্তু জৈবিক নিয়ম ও সম্পর্কের স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখতে এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভালো।
সম্পর্ক চলাকালীন যেসব ভুল এড়িয়ে চলবেন
দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবেন না
যৌনতা কোনো দায়িত্বের কাজ নয়—এটি একটি সময় উপভোগ করার বিষয়।
বিশেষ করে আপনি যদি স্ত্রীর যত্ন নিচ্ছেন বা তাঁকে উত্তেজিত করতে চেষ্টা করছেন, তাহলে তাড়াহুড়া করলে তাঁর দিক থেকে মানসিক বিরক্তি তৈরি হতে পারে।
যৌন সম্পর্ক হলো দুজনের শান্তিপূর্ণ ও আন্তরিক সময় কাটানোর মাধ্যম, তাই সময় নিয়ে করুন।
ধন্যবাদ বা প্রতিদান প্রত্যাশা করবেন না
অনেক সময় আপনি ভালো কিছু করেছেন, কিন্তু তার জন্য প্রত্যাশা করা বা স্ত্রীর কাছ থেকে জোর করে প্রতিক্রিয়া চাওয়া এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করে।
যদি আপনি ফোরপ্লে করেছেন বা বিশেষ যত্ন নিয়েছেন, তাহলে সেটার আসল সৌন্দর্য হচ্ছে নিজের ইচ্ছা থেকে করা।
শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা থেকেই যা করবেন, সেটাই সবচেয়ে সুন্দর।
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ “না” বলার বিষয়
শুধু ফলাফলের দিকে মনোযোগ না দিয়ে পুরো অভিজ্ঞতাকে উপভোগ করুন
শুধু বীর্যপাত বা চূড়ান্ত উত্তেজনাকেই লক্ষ্য করলে, আপনি সেই অনুভবগুলো হারাবেন, যা সঙ্গমের মূল আনন্দ।
রুক্ষ আচরণ বা খেলায় মেতে ওঠার আগে আলোচনা করুন
কোনো কিছু এমন করতে যাবেন না, যাতে আপনার স্ত্রী কষ্ট পান বা অসম্মানিত বোধ করেন।
যদি সম্পর্ক একটু রোমাঞ্চকর করতে চান, আগে পারস্পরিক সম্মতিতে নির্ধারিত সংকেত শব্দ ঠিক করে নিন, যেন আনন্দ ও কষ্টের সীমা স্পষ্ট থাকে।
বাহ্যিক বিষয়কে ঢুকতে দেবেন না
ফোন, টেক্সট, খেলা দেখা বা অন্য কোনো কিছু—এই সময় শুধু আপনাদের দুজনের জন্য।
বাহ্যিক দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুজনের মাঝে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
স্ত্রীকে ভুল নামে ডাকবেন না
এই বিষয়টি নিজেই বলার মতো—এটি খুবই অপমানজনক ও সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সম্পূর্ণ নীরব থাকা এড়িয়ে চলুন
শব্দহীন সম্পর্ক অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করে।
হালকা শব্দ, প্রশংসা, বা উৎসাহমূলক কিছু কথা—এগুলো সম্পর্ককে প্রাণবন্ত করে তোলে।
যৌনজীবনে খুশি থাকার জন্য কেবল কী করা উচিত তাই নয়, কী করা উচিত নয়—সেটাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
সম্পর্ক গড়ে ওঠে আশ্রয়, বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে। তাই সময় নিয়ে, সচেতন থেকে এবং আন্তরিকভাবে উপভোগ করাই সবচেয়ে ভালো পথ।
পুরুষদের মধ্যে ইরেকটাইল ডিসফাংশন (ED): কারণ, সমাধান ও পরামর্শ
ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা ED এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন পুরুষ যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার সময় লিঙ্গ উত্থান (erection) পেতে বা ধরে রাখতে সমস্যায় পড়েন।
এটি নিজেই কোনো রোগ নয়—বরং একাধিক শারীরিক বা মানসিক সমস্যার একটি লক্ষণ।
ED সমস্যাটি জটিল কারণ এর পেছনে থাকতে পারে:
- রক্ত সঞ্চালনের অসুবিধা
- স্নায়ুর কার্যকারিতা কমে যাওয়া
- হরমোনজনিত সমস্যা
- বা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
স্ট্যাটিসটিকস অনুযায়ী:
উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, ৫০ বছরের পুরুষদের প্রায় ৫০%-এরই হালকা বা মাঝারি ED থাকে।
প্রতি দশক বয়স বাড়ার সঙ্গে এই সংখ্যাও ১০% করে বাড়ে।
অর্থাৎ, ৮০ বছরের পুরুষদের প্রায় ৮০% এরই কোনো না কোনো মাত্রায় ED দেখা যায়।
যদি আপনি এমন সমস্যার সম্মুখীন হন, প্রাথমিক চিকিৎসক বা ইউরোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলুন। অনেক সময় ওষুধ ছাড়াও সমাধান পাওয়া যায়।
ED-এর ঘরোয়া সমাধান ও জীবনধারা পরিবর্তন
মদ্যপান ও নেশা বাদ দিতে হবে
জীবনের চাপ কমানোর চেষ্টা করুন – যেমন: হাঁটা, যোগব্যায়াম, বা পছন্দের কাজ করুন
ধূমপান ও অবৈধ/অপ্রয়োজনীয় ওষুধ থেকে দূরে থাকুন
রাতে ভালো ঘুমান
যদি ওজন বেশি হয়, নিয়ন্ত্রণে আনুন
যদি মানসিক চাপ বা সম্পর্কের টানাপোড়েন ED-এর কারণ হয়, তবে কাউন্সেলিং বা দম্পতি থেরাপি বিবেচনা করুন
নিয়মিত চেকআপ করান—কারণ অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরল ED-র কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ডাক্তার আপনার চলমান ওষুধগুলোর প্রভাবও মূল্যায়ন করতে পারেন।
নিজের ইচ্ছায় ওষুধ বন্ধ করবেন না—এ ব্যাপারে আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
চিকিৎসা ব্যবস্থাও রয়েছে
রক্ত চলাচল বাড়াতে ওষুধ:
যেমন— আমরা সালিহাত ফুড দিচ্ছি অরগানিক ও ন্যাচারাল আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি মেডিসিন আপনারা আমাদের শপ থেকে নিতে পারেন অথবা আমাদের অভিজ্ঞ হেকিমের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন।
টেস্টোস্টেরন হরমোন চিকিৎসা:
যারা টেস্টোস্টেরনের ঘাটতিজনিত ED-তে ভুগছেন, তাঁদের জন্য জেল, প্যাচ বা ইনজেকশন হিসেবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ইনজেকশন থেরাপি:
যদি আপনি হৃদরোগ বা লিভারের সমস্যার কারণে সাধারণ ED ওষুধ নিতে না পারেন, তাহলে লিঙ্গের পাশে বিশেষ ইনজেকশন নেওয়ার ব্যবস্থাও আছে।
ভ্যাকুয়াম ইরেকশন ডিভাইস (penis pump):
এই যন্ত্র রক্ত চলাচল বাড়িয়ে লিঙ্গের উত্থান ঘটায়।
সার্জিকাল ইমপ্লান্ট:
সব ধরনের চিকিৎসা ব্যর্থ হলে, লিঙ্গে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি যন্ত্র বসানো হয়, যা প্রয়োজনে উত্থান ঘটাতে সাহায্য করে।
উপসংহার:
যৌনজীবন পুরুষদের জন্য শুধু আনন্দ নয়, বরং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অংশ। বয়স বাড়লেও যৌন জীবন থেমে থাকে না—খোলামেলা কথা বলাই হল সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।
স্ত্রীর সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করুন—
কী ভালো লাগে, কী ভালো লাগে না
কেমন অনুভব হয়
এবং কীভাবে একে অপরের অনুভূতি সম্মান করা যায়
এই সহজ অথচ গভীর বোঝাপড়াই জীবনের অন্যতম বড় আনন্দ এনে দিতে পারে।
সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন।