কোন কোন খাবারে অ্যালার্জি হয়

কোন কোন খাবারে অ্যালার্জি হয়: তালিকা, চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা

খাদ্য অ্যালার্জি একটি সাধারণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা যা সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। প্রতিরোধ ব্যবস্থার ভুল উপলব্ধির ফলস্বরূপ, নির্দিষ্ট খাদ্যের প্রোটিনের প্রতি এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া অনেক সময় জীবনের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। বর্তমান নির্দেশিকাটি পাঠকদের খাদ্য অ্যালার্জির প্রাথমিক ধারণা থেকে শুরু করে, এর বিস্তৃত লক্ষণ, নির্ভরযোগ্য নির্ণয় পদ্ধতি এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা কৌশল সম্পর্কে অবহিত করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে, কোন কোন খাবারে অ্যালার্জি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার একটি ব্যাপক ও সুসংগঠিত তালিকা এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিযোগীদের চেয়ে উন্নত টপিক্যাল অ্যালাইনমেন্ট, গভীর শব্দার্থিক ব্যাখ্যা এবং বিস্তৃত উদাহরণ ও সম্পর্কের মাধ্যমে বিষয়বস্তুকে সমৃদ্ধ করা, যা পাঠককে একটি উচ্চতর প্রাসঙ্গিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করবে।

Table of Contents

খাদ্য অ্যালার্জি কী?

খাদ্য অ্যালার্জি (Food Allergy) হলো একটি রোগ যেখানে আপনার প্রতিরোধ ব্যবস্থা (immune system) নির্দিষ্ট খাদ্য উপাদানগুলিকে, বিশেষ করে প্রোটিনগুলিকে, ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করে ভুল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যখন অ্যালার্জেন (allergen) নামক এই প্রোটিনগুলি শরীরে প্রবেশ করে, তখন প্রতিরোধ ব্যবস্থা আক্রমণকারীদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য অ্যান্টিবডি (antibody) তৈরি করে। ফলস্বরূপ, শরীর বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ (যেমন হিস্টামিন) নির্গত করে, যা অ্যালার্জির লক্ষণ তৈরি করে। এটি একটি সাধারণ খাদ্য অসহিষ্ণুতা (Food Intolerance) থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, কারণ খাদ্য অসহিষ্ণুতায় সাধারণত প্রতিরোধ ব্যবস্থা জড়িত থাকে না, বরং এটি পরিপাকতন্ত্রের একটি সমস্যা যা হালকা উপসর্গ তৈরি করে এবং খুব কমই জীবন-হুমকি সৃষ্টি করে।

খাদ্য অ্যালার্জির প্রকারভেদ

খাদ্য অ্যালার্জিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  • IgE-মধ্যস্থতাকারী অ্যালার্জি (IgE-Mediated Allergy): এটি সবচেয়ে প্রচলিত খাদ্য অ্যালার্জি। যখন অ্যালার্জেন শরীরকে প্রভাবিত করে, তখন প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইমিউনোগ্লোবুলিন E (IgE) অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই IgE অ্যান্টিবডিগুলি অ্যালার্জেনকে চিহ্নিত করে এবং শরীর থেকে হিস্টামিন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে। এই পদার্থগুলি ত্বকের প্রতিক্রিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন দ্রুত-প্রতিক্রিয়াশীল লক্ষণ (যেমন, খাবার খাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে) সৃষ্টি করতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, এটি অ্যানাফিল্যাক্সিস (Anaphylaxis) নামক জীবন-হুমকির পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। [Healthline]

  • নন-IgE-মধ্যস্থতাকারী অ্যালার্জি (Non-IgE Mediated Allergy): এই ধরনের অ্যালার্জিতে IgE অ্যান্টিবডিগুলির পরিবর্তে প্রতিরোধ ব্যবস্থার অন্যান্য অংশ জড়িত থাকে। এক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া সাধারণত ধীরগতিতে শুরু হয় এবং খাদ্যের সংস্পর্শে আসার কয়েক ঘন্টা বা এমনকি কয়েক দিন পরেও দেখা যেতে পারে। প্রধানত পরিপাকতন্ত্র (digestive system) বা ত্বকের (skin) লক্ষণ (যেমন একজিমা, ক্রনিক হার্টবার্ন) দেখা যায়। নন-IgE অ্যালার্জির নির্ণয় প্রায়শই কঠিন হয়, কারণ এর লক্ষণগুলি প্রায়শই খাদ্য অসহিষ্ণুতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারে এবং এটির জন্য কোনো নির্দিষ্ট রক্ত পরীক্ষা নেই। [Healthline]

খাদ্য অ্যালার্জি বনাম অসহিষ্ণুতা: মূল পার্থক্য

এই দুটি অবস্থার মধ্যে পার্থক্য বোঝা জরুরি:

বৈশিষ্ট্য খাদ্য অ্যালার্জি (Food Allergy) খাদ্য অসহিষ্ণুতা (Food Intolerance)
অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Immune system) জড়িত; IgE বা নন-IgE অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়। পরিপাকতন্ত্র (Digestive system) জড়িত; এনজাইমের অভাব বা রাসায়নিক সংবেদনশীলতার কারণে।
লক্ষণের তীব্রতা হালকা থেকে গুরুতর (যেমন: অ্যানাফিল্যাক্সিস); জীবন-হুমকির হতে পারে। সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি; কদাচিৎ গুরুতর বা জীবন-হুমকির।
লক্ষণ প্রকাশ সাধারণত দ্রুত (মিনিটের মধ্যে); নন-IgE এর ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা থেকে দিন। সাধারণত ধীরগতিতে (কয়েক ঘণ্টা পর); হজমে সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত।
উদাহরণ দুধ, চিনাবাদাম, ডিম। ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, গ্লুটেন সংবেদনশীলতা।
পরিমাণ অতি সামান্য অ্যালার্জেনও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণত বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ করলে প্রতিক্রিয়া হয়।
চিকিৎসা সম্পূর্ণভাবে অ্যালার্জেন পরিহার; এপিফাইনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টর। সীমিত পরিমাণ গ্রহণ; এনজাইম সাপ্লিমেন্ট (নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে)।

কোন কোন খাবারে সবচেয়ে বেশি অ্যালার্জি হয় তার তালিকা

অনেক খাবারেই অ্যালার্জি হতে পারে, তবে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) অনুযায়ী ৯টি খাবার প্রায় ৯০% অ্যালার্জির কারণ। যুক্তরাজ্যে, ১৪টি প্রধান খাদ্য অ্যালার্জেন (Major Food Allergens) আইনত বাধ্যতামূলকভাবে লেবেলিং এর অন্তর্ভুক্ত। এখানে সবচেয়ে সাধারণ অ্যালার্জেনগুলির একটি বিস্তৃত তালিকা এবং তাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো:

গরুর দুধ (Cow’s Milk)

  • প্রচলন ও স্থিতিশীলতা: এটি শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের (৩ বছরের কম বয়সী) মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ খাদ্য অ্যালার্জিগুলির মধ্যে একটি, যা প্রায় ২-৩% শিশুদের প্রভাবিত করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই (প্রায় ৯০%) শিশুরা ৩ বছর বয়সের মধ্যে এই অ্যালার্জি কাটিয়ে ওঠে। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়।

  • অ্যালার্জেনিক প্রোটিন: দুধে প্রধানত কেসিন (Casein) এবং হোয়ে (Whey) নামক প্রোটিন থাকে, যা প্রতিরোধ ব্যবস্থার ভুল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কেসিন একটি সলিড প্রোটিন যা দই তৈরিতে সহায়তা করে, আর হোয়ে একটি তরল প্রোটিন যা কেসিনের চেয়ে তাপে কম স্থিতিশীল।

  • লুকানো উৎস: গরুর দুধ বা তার থেকে উৎপাদিত পণ্য (dairy products) যেমন তরল দুধ (milk), দুধের গুঁড়ো (milk powder), দই (yogurt), ছানা বা পনির (cheese), মাখন (butter), মার্জারিন (margarine), আইসক্রিম (ice cream), ক্রিম (cream) এবং বহু প্রক্রিয়াজাত খাদ্য (processed food items) যেমন বিস্কুট, চকোলেট, বেক করা জিনিস। 

  • ক্রস-প্রতিক্রিয়া: যারা গরুর দুধে অ্যালার্জিপ্রবণ, তাদের ছাগল (goat) বা ভেড়ার দুধেও (sheep milk) প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কারণ তাদের প্রোটিন কাঠামো অনেক মিলসম্পন্ন।

  • গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য: ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা (lactose intolerance) থেকে গরুর দুধের অ্যালার্জি সম্পূর্ণ আলাদা। ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতায় দুধের চিনি (ল্যাকটোজ) হজম করতে এনজাইমের (ল্যাকটেজ) অভাব হয়, প্রতিরোধ ব্যবস্থা জড়িত থাকে না এবং লক্ষণগুলো সাধারণত পরিপাকতন্ত্রে সীমাবদ্ধ থাকে। অন্যদিকে, দুধের অ্যালার্জি প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া।

 ডিম (Eggs)

  • প্রচলন ও স্থিতিশীলতা: শিশুদের মধ্যে ডিমের অ্যালার্জি দ্বিতীয় সর্বাধিক সাধারণ। সৌভাগ্যবশত, প্রায় ৬৮% শিশু ১৬ বছর বয়সের মধ্যে ডিমের অ্যালার্জি থেকে মুক্ত হয়। [Healthline, Medicinenet]

  • অ্যালার্জেনিক প্রোটিন: ডিমের সাদা অংশে (egg whites) থাকা প্রোটিন (যেমন ওভালবুমিন, কনাআবুমিন, ওভোমুকোয়েড) সাধারণত অ্যালার্জির প্রধান কারণ। ডিমের কুসুমের (egg yolk) প্রোটিনগুলি ভিন্ন হওয়ায় কুসুমে অ্যালার্জি কম দেখা যায়। [Healthline]

  • তাপের প্রভাব: তাপ ডিমের প্রোটিনের (proteins) গঠন পরিবর্তন করে, ফলে অনেক ডিমের অ্যালার্জিযুক্ত শিশু বেক করা খাবারে (যেমন মাফিন, কেক) ডিম সহ্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বেক করা ডিমের প্রোটিন গ্রহণে সহিষ্ণুতা তৈরি হতে পারে। তবে, রান্নার ধরণ গুরুত্বপূর্ণ: হালকা রান্না করা ডিম (যেমন: পচ ডিম, ডিম ভাজা, অমলেট) তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। [Healthline, Kitt Medical]

  • লুকানো উৎস: ডিম, ডিমের সাদা অংশ (egg whites), ডিমের কুসুম (egg yolk) এবং ডিম দিয়ে তৈরি পণ্য যেমন কেক (cake), কুকি (cookies), কাস্টার্ড (custard), মেওনিজ (mayonnaise), সস (sauces) এবং কিছু বেকারি পণ্য।

গাছের বাদাম (Tree Nuts)

  • প্রচলন ও স্থিতিশীলতা: বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩% মানুষকে গাছের বাদামের অ্যালার্জি প্রভাবিত করে এবং এটি শিশুদের ও প্রাপ্তবয়স্কদের উভয়ক্ষেত্রেই গুরুতর অ্যানাফিল্যাক্সিস সৃষ্টি করতে পারে। এই অ্যালার্জি সাধারণত জীবনব্যাপী (lifelong), এবং ১০% এরও কম মানুষ এটিকে কাটিয়ে উঠতে পারে। 

  • উদাহরণ: আখরোট (walnuts), বাদাম (almonds), কাজু (cashews), পেস্তা (pistachios), ব্রাজিল নাট (Brazil nuts), পেকান (pecans), ম্যাকাডেমিয়া নাট (macadamia nuts) এবং হিজল বাদাম (hazelnuts)। [Healthline, Allergy UK]

  • গুরুত্ব: গাছের বাদামের অ্যালার্জি গুরুতর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এবং অ্যানাফিল্যাক্সিস-সম্পর্কিত মৃত্যুর অর্ধেকের জন্য দায়ী।

  • ক্রস-প্রতিক্রিয়া: যদি একজন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট গাছের বাদামে অ্যালার্জিপ্রবণ হন, তাহলে অন্য গাছের বাদামগুলোতেও অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই, চিকিৎসকরা প্রায়শই সব ধরণের গাছের বাদাম এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেন।

  • লুকানো উৎস: বাদামের তেল (nut oil), বাদামের মাখন (nut butter), বেকারি পণ্য (baked goods), গ্রানোলা (granola), চকোলেট, সিরিয়াল (cereals) এবং ডেজার্ট (desserts)।

চিনাবাদাম (Peanuts)

  • প্রচলন ও স্থিতিশীলতা: চিনাবাদামের অ্যালার্জি খুব সাধারণ এবং গুরুতর, সম্ভাব্য প্রাণঘাতী অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ফুড অ্যালার্জি রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (FARE) অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬.১ মিলিয়ন মানুষ চিনাবাদামের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত। এটি ১৮ বছর বা তার কম বয়সী মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ অ্যালার্জি। যদিও ২০% শিশু কিশোর বয়সে প্রবেশ করলে এটি কাটিয়ে উঠতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি জীবনব্যাপী হয়।

  • পরিবার: চিনাবাদাম লেগিউম (legume) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, যা গাছের বাদামের চেয়ে আলাদা, এবং এটি মাটির নিচে ফলে।

  • ক্রস-প্রতিক্রিয়া: প্রায় ৪০% চিনাবাদামের অ্যালার্জিযুক্ত মানুষের কমপক্ষে একটি গাছের বাদামেও (tree nut) অ্যালার্জি থাকে। 

  • আক্রমণ প্রতিরোধ: গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে শৈশবে চিনাবাদাম গ্রহণ (যেমন, পরিপক্ক করার সময়) এই অ্যালার্জি প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে, তবে এই বিষয়ে আরও নিশ্চিত তথ্যের প্রয়োজন রয়েছে। 

  • চিকিৎসা: বর্তমানে, ৪-১৭ বছর বয়সী মানুষের জন্য FDA কর্তৃক Palforzia নামক মৌখিক ইমিউনোথেরাপি ঔষধ চিনাবাদামের অ্যালার্জির চিকিৎসায় অনুমোদিত।

  • লুকানো উৎস: চিনাবাদামের তেল (peanut oil), চিনাবাদামের মাখন (peanut butter), সস (sauces), গ্রানোলা (granola), বেক করা পণ্য (baked goods), মিষ্টান্ন (candies) এবং এশিয়ান খাবার (Asian cuisine)।

শেলফিশ (Shellfish)

  • প্রচলন ও স্থিতিশীলতা: শেলফিশ অ্যালার্জি একটি সাধারণ এবং সাধারণত জীবনব্যাপী অ্যালার্জি। প্রায় ৬০% মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় তাদের প্রথম অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন।

  • প্রকারভেদ ও উদাহরণ: শেলফিশ দুটি প্রধান পরিবারে বিভক্ত:

    • ক্রাস্টেশিয়ান্স (Crustaceans): চিংড়ি (shrimp), গলদা চিংড়ি (prawns), কাঁকড়া (crab), লবস্টার (lobster) এবং ক্রেফিশ (crayfish)। [Healthline, Allergy UK] ক্রাস্টেশিয়ান্স অ্যালার্জি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে চিংড়িতে।

    • মলাস্কস (Mollusks): ঝিনুক (clams), স্ক্যালপস (scallops), ওয়েস্টার (oysters), মাসেলস (mussels), স্কুইড (squid), অক্টোপাস (octopus) এবং অ্যাবালোন (abalone)। 

  • অ্যালার্জেনিক প্রোটিন: প্রধান অ্যালার্জেনিক প্রোটিন হলো ট্রপোমায়োসিন (tropomyosin), আর্জিনিন কিনেজ (arginine kinase), এবং পার্ভালবুমিন (parvalbumin)।

  • লুকানো উৎস: শেলফিশ বা মাছ রান্না করার সময় নিঃসৃত বাষ্পের মাধ্যমে (vapors) অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই রান্না করার সময় দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। 

  • গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: দূষিত বা খারাপ মানসম্পন্ন শেলফিশ থেকে হওয়া অসুস্থতা প্রায়শই অ্যালার্জির সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়, কারণ লক্ষণগুলি (যেমন বমি, ডায়রিয়া) একই রকম হতে পারে।

মাছ (Fish)

  • প্রচলন ও স্থিতিশীলতা: অন্যান্য শৈশবের অ্যালার্জির বিপরীতে, মাছের অ্যালার্জি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়; প্রায় ৪০% মানুষের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় এটি ধরা পড়ে। 

  • অ্যালার্জেনিক প্রোটিন: মাছের প্রধান অ্যালার্জেন হলো পার্ভালবুমিন (parvalbumin) নামক একটি পেশী প্রোটিন।

  • ক্রস-প্রতিক্রিয়া: একটি নির্দিষ্ট মাছের প্রতি অ্যালার্জি থাকলে অন্যান্য ধরণের মাছেও অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে, শেলফিশ (shellfish) এবং পাখনাযুক্ত মাছে (fin fish) অ্যালার্জেনিক প্রোটিন ভিন্ন হয়, তাই যারা শেলফিশে অ্যালার্জিপ্রবণ, তাদের মাছের প্রতি অ্যালার্জি নাও থাকতে পারে।

  • লক্ষণ: বমি (vomiting) এবং ডায়রিয়া (diarrhea) হলো প্রধান লক্ষণ। বিরল ক্ষেত্রে এটি গুরুতর অ্যানাফিল্যাক্সিসও ঘটাতে পারে। 

  • লুকানো উৎস: ফিশ সস, সস বা ড্রেসিং-এ মাছের ব্যবহার (যেমন Caesar salad dressing), এশিয়ান খাবার এবং কিছু ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট (fish oil supplements)।

গম (Wheat)

  • প্রচলন ও স্থিতিশীলতা: গমের অ্যালার্জি শিশুদের মধ্যে বেশি প্রচলিত, তবে বেশিরভাগ শিশু ১০ বছর বয়সের মধ্যে এই অ্যালার্জি কাটিয়ে ওঠে। 

  • অ্যালার্জেনিক প্রোটিন: গমে উপস্থিত প্রোটিনের (বিশেষত গ্লুটেন-এর অংশ) প্রতি শরীরের প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া থেকে এটি হয়।

  • গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য: এটি সিলিয়াক রোগ (Celiac Disease) এবং নন-সিলিয়াক গ্লুটেন সংবেদনশীলতা (Non-Celiac Gluten Sensitivity) থেকে ভিন্ন। সিলিয়াক রোগ গ্লুটেন দ্বারা ট্রিগার হওয়া একটি স্বয়ংক্রিয় রোগ, যা অন্ত্রের (intestine) গুরুতর ক্ষতি করে। গমের অ্যালার্জির রোগীরা শুধুমাত্র গম পরিহার করেন, তবে অন্যান্য গ্লুটেন-যুক্ত শস্য (যেমন বার্লি, রাই) গ্রহণ করতে পারেন যদি সেগুলিতে গম না থাকে।

  • লুকানো উৎস: রুটি (bread), পাস্তা (pasta), সিরিয়াল (cereals), বিস্কুট (biscuits), কেক (cake), কুকি (cookies), ক্র্যাকার (crackers), সস (sauces), স্যুপ (soups), ফ্রাইড ফুড (fried foods) এবং কিছু প্রক্রিয়াজাত মাংস।

সয়াবিন (Soy)

  • প্রচলন ও স্থিতিশীলতা: শিশুদের মধ্যে সয়াবিনের অ্যালার্জি অপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়, তবে এটি প্রায় ০.৫% শিশুদের প্রভাবিত করে, বিশেষত ৩ বছর বয়সের নিচে। প্রায় ৭০% শিশু এই অ্যালার্জি কাটিয়ে ওঠে। 

  • অ্যালার্জেনিক প্রোটিন: সয়াবিন (soybeans) বা সয়াবিনযুক্ত পণ্যে থাকা প্রোটিনের (glycinin, beta-conglycinin) প্রতি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

  • লক্ষণ: সয়াবিন অ্যালার্জির লক্ষণগুলি মুখের আশেপাশে চুলকানি (itchy mouth), সর্দি (runny nose) থেকে শুরু করে ফুসকুড়ি (rash), শ্বাসকষ্ট (breathing difficulties) এবং বিরল ক্ষেত্রে অ্যানাফিল্যাক্সিস পর্যন্ত হতে পারে। 

  • লুকানো উৎস: সয়া দুধ (soy milk), সয়া সস (soy sauce), তোফু (tofu), এডামামে (edamame), মিসো (miso), সয়া তেল (soy oil), সয়া আটা (soy flour) এবং বহু প্রক্রিয়াজাত খাবার (যেমন বিস্কুট, চকোলেট)। যুক্তরাজ্যের প্রায় ৬০% উৎপাদিত খাদ্যেই সয়া পাওয়া যায়। 

তিল (Sesame)

  • গুরুত্ব ও নিয়ন্ত্রণ: তিলকে ২০২১ সালে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) কর্তৃক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবম প্রধান অ্যালার্জেন (ninth major allergen) হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা খাদ্য লেবেলে (food labels) এর উল্লেখ বাধ্যতামূলক করেছে। 

  • প্রচলন: চিনাবাদাম ও গাছের বাদামে IgE-মধ্যস্থতাকারী অ্যালার্জিযুক্ত প্রায় ১৭% শিশুদের তিল অ্যালার্জি দেখা যায়। 

  • লুকানো উৎস: হামুস (hummus), তাহিনি (tahini), হালাভা (halvah), এশিয়ান খাবার (Asian cuisine), ফাস্ট ফুড (fast food), বেকারি পণ্য (baked goods) যেমন ব্রেডস্টিক (breadsticks), ব্যাগের (bagels), এবং সালাদ ড্রেসিং (salad dressings) সহ বিভিন্ন ধরনের খাবারে তিল ব্যবহার করা হয়। তিলের তেল (sesame oil) রান্নার ক্ষেত্রে একটি লুকানো অ্যালার্জেন হতে পারে।

  • ক্রস-প্রতিক্রিয়া: চিনাবাদাম এবং গাছের বাদামের অ্যালার্জির সঙ্গে তিল অ্যালার্জির সম্পর্ক দেখা যায়।

সর্ষে (Mustard)

  • প্রচলন: সর্ষের অ্যালার্জি বিরল হলেও, এটি গুরুতর অ্যানাফিল্যাক্টিক (anaphylactic) প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। 

  • উদ্ভিদ পরিবার: সর্ষে ব্রাসিকা (Brassica) পরিবারের (Brassicaceae family) সদস্য, যার মধ্যে ব্রাসেলস স্প্রাউটস (Brussels sprouts), ব্রোকলি (broccoli) এবং বাঁধাকপিও (cabbage) রয়েছে। 

  • লুকানো উৎস: সর্ষে শুধু সরাসরি খাবারের অনুষঙ্গ হিসেবে নয়, বরং সস, ড্রেসিং, সালাদ, এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো অ্যালার্জেন (masked or hidden allergen) হিসাবে উপস্থিত থাকতে পারে। সর্ষে তেল এবং সর্ষের পাতা থেকেও প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

সেলারি (Celery)

  • গুরুত্ব: ইউরোপে, খাদ্য লেবেলে বাধ্যতামূলক ১৪টি অ্যালার্জেনের (14 Major Food Allergens) মধ্যে সেলারিও অন্তর্ভুক্ত। ইউরোপে এর প্রকোপ ২.৮-১১.১% পর্যন্ত হতে পারে।

  • লুকানো উৎস: সেলারি প্রায়শই স্যুপ (soups), স্ট্যু (stews), স্টক (stocks), সস (sauces), এবং সালাদের (salads) মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো থাকে, এমনকি কিছু ভেজিটেবল জুস (vegetable juices) বা মসলাতেও এটি পাওয়া যায়। 

  • প্রতিক্রিয়া: কাঁচা সেলারি খাওয়ার পর হালকা ওরাল অ্যালার্জি সিন্ড্রোম (oral allergy syndrome) থেকে শুরু করে গুরুতর পদ্ধতিগত প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।

লুপিন (Lupin)

  • ব্যবহার: লুপিন হলো একটি উদ্ভিদ, যার বীজ আটা (flour), রুটি (bread), পাস্তা (pasta), সস (sauces) এবং নিরামিষাশী পণ্য (vegetarian products) তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এটি লেগিউম (legume) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। 

  • ক্রস-প্রতিক্রিয়া: যেহেতু লুপিন লেগিউম পরিবারভুক্ত (যে পরিবারে চিনাবাদামও রয়েছে), চিনাবাদামে অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের লুপিন অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। [Kitt Medical]

  • লুকানো উৎস: পাউরুটি (bread), বেক করা পণ্য (baked goods), প্রোটিন বার (protein bars), মাংস-ভিত্তিক পণ্য (meat-based products) এবং কিছু পানীয়তে লুপিন ব্যবহার হতে পারে।

গ্লুটেন-যুক্ত শস্য (Cereals containing Gluten)

  • সংজ্ঞা: যেসব শস্যে গ্লুটেন প্রোটিন থাকে (যেমন গম, রাই, বার্লি এবং ওটস)। এটি শুধুমাত্র গমের অ্যালার্জির চেয়ে বেশি বিস্তৃত। [Allergy UK]

  • উদাহরণ: গম (Wheat), রাই (Rye), বার্লি (Barley), ওটস (Oats)। [Allergy UK]

  • গুরুত্ব: যুক্তরাজ্যে প্রায় ২-৫% শিশু এবং প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনো খাদ্য অ্যালার্জিতে ভোগেন, যেখানে গ্লুটেন-যুক্ত শস্যের অবদান উল্লেখযোগ্য। [Kitt Medical]

  • লুকানো উৎস: রুটি (bread), পাস্তা (pasta), সিরিয়াল (cereals), বিস্কুট (biscuits), কিছু সস ও স্যুপ, মাল্ট (malt) এবং অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবারে (processed foods)। [Kitt Medical]

সালফার ডাই অক্সাইড ও সালফাইট (Sulphur Dioxide and Sulphites)

  • সংজ্ঞা ও ব্যবহার: সালফার ডাই অক্সাইড (E220) এবং সালফাইট (E221-E228) প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এদের ঘনত্ব যখন প্রতি মিলিয়ন পার্টস (parts per million) এর চেয়ে বেশি হয়, তখন এটি অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করতে পারে।

  • লুকানো উৎস: শুকনো ফল (dried fruits), ওয়াইন (wine), বিয়ার (beer), নরম পানীয় (soft drinks), সিরকা (vinegar), প্রক্রিয়াজাত মাংস (processed meats) যেমন সসেজ (sausages) ও বার্গার (burgers), ফলের জুস এবং আলু পণ্য (potato products) ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। 

  • প্রতিক্রিয়া: বিরল হলেও, সংবেদনশীল ব্যক্তিদের (বিশেষ করে যাদের হাঁপানি আছে) মধ্যে শ্বাসকষ্ট, শিসের মতো শ্বাসপ্রশ্বাস, শ্বাসনালীর জ্বালাপোড়া এবং গুরুতর অ্যানাফিল্যাক্সিস পর্যন্ত হতে পারে। সালফাইট অনেক সময় খাবারের লেবেলে ‘ব্লিচিং এজেন্ট’ (bleaching agent) হিসেবে ব্যবহৃত হলেও তার নাম উল্লেখ থাকে না, তাই এক্ষেত্রে সতর্কতা আবশ্যক। 

অন্যান্য/কম প্রচলিত খাদ্য অ্যালার্জি (Less Common Food Allergies)

উপরে উল্লেখিত ১৪টি প্রধান অ্যালার্জেন ছাড়াও, কিছু কম প্রচলিত খাবারও রয়েছে যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যদিও এগুলি বিরল, তবুও কিছু মানুষের মধ্যে মৃদু থেকে গুরুতর লক্ষণ দেখা যেতে পারে। এগুলি সাধারণত অঞ্চল বা ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়।

  • ফলের অ্যালার্জি: পীচ (peach), কলা (banana), কিউই ফল (kiwi fruit), প্যাশন ফল (passion fruit), অ্যাভোকাডো (avocado) ইত্যাদি ফলে অ্যালার্জি দেখা যায়। অ্যাভোকাডো অ্যালার্জি ল্যাটেক্স অ্যালার্জির সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।

  • শাকসবজির অ্যালার্জি: সেলারি (celery), গাজর (carrot), বেল পেপার (bell pepper), আলু (potato), কুমড়ো (pumpkin), মাশরুম (mushroom), পেঁয়াজ (onion) ইত্যাদিতে অ্যালার্জি দেখা যেতে পারে। গাজরের অ্যালার্জি প্রায়শই ওরাল অ্যালার্জি সিন্ড্রোম বা ফুলের রেণুর অ্যালার্জির সঙ্গে যুক্ত থাকে। 

  • বীজ এবং মসলা: শণের বীজ (linseed), সূর্যমুখী বীজ (sunflower seed), ধনে (coriander), মৌরি (aniseed), রসুন (garlic), ক্যামোমিল (chamomile) ইত্যাদি মসলা এবং বীজে অ্যালার্জি বিরল হলেও কিছু সংবেদনশীল ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায়।

  • অন্যান্য: সয়া (soy), তিওয়ারি, কোকাম্বির, কফি (coffee), ম্যাপেল সিরাপ (maple syrup), ভ্যানিলা (vanilla)। 

খাদ্য অ্যালার্জি নির্ণয়

খাদ্য অ্যালার্জির সঠিক নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি বা আপনার প্রিয়জন খাদ্যের অ্যালার্জির লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, যেমন অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ (allergist) বা আপনার পারিবারিক ডাক্তারের (GP) সাথে যোগাযোগ করা অপরিহার্য। তারা একটি সম্পূর্ণ মেডিকেল ইতিহাস (medical history) ও শারীরিক পরীক্ষার (physical examination) মাধ্যমে প্রাথমিক মূল্যায়ন করবেন। 

প্রাথমিক মূল্যায়নের পর, নির্ণয়ের জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা (diagnostic tests)গুলি সুপারিশ করা হয়:

  • স্কিন প্রিক টেস্ট (Skin Prick Test): এই পরীক্ষায়, সন্দেহভাজন অ্যালার্জেনগুলির খুব সামান্য পরিমাণ তরল ত্বকে প্রয়োগ করা হয় (সাধারণত হাতের বাহুতে) এবং তারপর একটি ছোট সূঁচ দিয়ে ত্বককে আলতোভাবে বিঁধে দেওয়া হয়। যদি সেই নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের প্রতি আপনার অ্যালার্জি থাকে, তবে প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে একটি ছোট, লাল, চুলকানিযুক্ত স্ফীতি (wheal) দেখা যাবে। 

  • ইন্ট্রাডার্মাল টেস্ট (Intradermal Test): স্কিন প্রিক টেস্টের ফলাফলে সন্দেহ থাকলে, ত্বকের নিচের স্তরে (dermis) অল্প পরিমাণে অ্যালার্জেন ইনজেকশন করা হয়। এটি একটি বেশি সংবেদনশীল পরীক্ষা, কিন্তু ফলস পজিটিভ (false positive) হওয়ার ঝুঁকিও বেশি।

  • রক্ত পরীক্ষা (Blood Tests): রক্তের নমুনা থেকে IgE অ্যান্টিবডির (specific IgE antibodies) মাত্রা পরিমাপ করা হয়। নির্দিষ্ট খাবারের অ্যালার্জেনের প্রতি উচ্চ IgE স্তর অ্যালার্জির উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে। এই পরীক্ষা (যেমন RAST বা ImmunoCAP) শরীরের কোন প্রোটিনের প্রতি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তা পরিমাপ করে। 

  • প্যাচ টেস্ট (Patch Test): নন-IgE-মধ্যস্থতাকারী অ্যালার্জি বা কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস (contact dermatitis) নির্ণয়ে এটি ব্যবহৃত হয়। সম্ভাব্য অ্যালার্জেনগুলি একটি প্যাচ (patch) এ রেখে ত্বকে (back or arm) আটকানো হয় এবং ৪৮-৭২ ঘন্টা পরে প্রতিক্রিয়া দেখা হয়।

  • ওরাল ফুড চ্যালেঞ্জ (Oral Food Challenge – OFC): এটি খাদ্য অ্যালার্জির নির্ণয়ের “গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড” পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত। এই পদ্ধতিতে, চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে, রোগীকে অল্প পরিমাণে সন্দেহজনক খাবার ধীরে ধীরে বাড়ানো পরিমাণে খাওয়ানো হয় এবং নিবিড়ভাবে লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই পরীক্ষা শুধুমাত্র চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানেই করা উচিত, কারণ এটি অ্যানাফিল্যাক্সিস-এর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। 

  • এলিমিনেশন ডায়েট (Elimination Diet): এই পদ্ধতিতে সন্দেহজনক খাদ্য উপাদানগুলিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (যেমন ২-৪ সপ্তাহ) সম্পূর্ণরূপে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়, তারপর ধীরে ধীরে সেগুলি আবার খাদ্যতালিকায় ফিরিয়ে এনে লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করা হয়। এটি অ্যালার্জেন চিহ্নিত করতে সহায়ক হতে পারে। 

সঠিক নির্ণয়ের পর, একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী আপনাকে খাদ্যের অ্যালার্জি পরিচালনা (managing food allergy) করার বিষয়ে পরামর্শ দেবেন এবং প্রয়োজনে একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান (registered dietitian) আপনার খাদ্যতালিকা ব্যবস্থাপনায় (dietary management) সহায়তা করতে পারেন।

খাদ্য অ্যালার্জির চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা

বর্তমানে খাদ্যের অ্যালার্জির কোনো নিরাময় (cure) নেই। [Healthline] তবে, বিজ্ঞানীরা অ্যালার্জির চিকিৎসায় নতুন কৌশল (new treatment strategies) নিয়ে ক্রমাগত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, যেমন ওরাল ইমিউনোথেরাপি (oral immunotherapy)। তবে, বর্তমান সময়ে কার্যকর ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি হলো অ্যালার্জেনকে সম্পূর্ণভাবে পরিহার (complete avoidance) করা এবং জরুরী পরিস্থিতিতে প্রস্তুত থাকা।

অ্যালার্জেন পরিহার (Allergen Avoidance)

আপনার অ্যালার্জি IgE-মধ্যস্থতাকারী হোক বা নন-IgE-মধ্যস্থতাকারী হোক, অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া এড়াতে অ্যালার্জেন-যুক্ত খাবার সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর জন্য:

  • খাদ্য লেবেল পড়া (Reading Food Labels): সমস্ত খাদ্য পণ্যের লেবেল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়া (meticulously reading food labels) অত্যাবশ্যক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union) এবং যুক্তরাজ্যের (United Kingdom) আইন অনুযায়ী ১৪টি প্রধান অ্যালার্জেন (Major Food Allergens) কে লেবেলে হাইলাইট (bolded or emphasized) করে দেখাতে হয়। নতুন আইন, যেমন ‘নাটাশা’স ল’ (Natasha’s Law), যা ২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকে কার্যকর হয়েছে, পূর্ব-প্যাক করা খাবারের (pre-packed for direct sale – PPDS) ক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ উপাদান তালিকা এবং অ্যালার্জেন চিহ্নিতকরণ বাধ্যতামূলক করেছে। 

  • ক্রস-কন্টামিনেশন (Cross-Contamination) এড়ানো: খাবার প্রস্তুতি এবং পরিবেশনের সময় অ্যালার্জেন-যুক্ত খাবারের সাথে অ্যালার্জেন-মুক্ত খাবারের সংস্পর্শ (accidental contact) এড়িয়ে চলা জরুরি। রান্নাঘরে আলাদা পাত্র এবং বাসন ব্যবহার, এবং রেস্টুরেন্ট বা ক্যাফেতে অর্ডার করার সময় স্টাফদের সতর্ক করা উচিত।

  • যোগাযোগ: স্কুলে, রেস্টুরেন্টে, কর্মস্থলে এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে আপনার অ্যালার্জির অবস্থা সম্পর্কে অন্যকে জানানো (communicating your allergy status) খুব জরুরি।

ফার্মাকোলজিক্যাল চিকিৎসা (Pharmacological Treatment)

অ্যালার্জির লক্ষণগুলি ব্যবস্থাপনার জন্য চিকিৎসক নিম্নলিখিত ঔষধগুলি নির্দেশ করতে পারেন:

  • এপিফাইনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টর (Epinephrine Auto-injectors): এটি গুরুতর অ্যানাফিল্যাক্সিসের (severe anaphylaxis) প্রতিকারের জন্য অপরিহার্য এবং জীবন রক্ষাকারী ঔষধ। যখন অ্যানাফিল্যাক্সিসের লক্ষণগুলি শুরু হয় (যেমন: শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ কমে যাওয়া), তখন অ্যাড্রেনালিন ইনজেক্ট করা প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া দ্রুত ফিরিয়ে আনতে (reverse the effects) সাহায্য করে। EpiPen এর মতো ডিভাইস ব্যবহারকারীকে দ্রুত এবং সহজভাবে অ্যাড্রেনালিন প্রয়োগ করতে সাহায্য করে। অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করার প্রশিক্ষণ থাকা উচিত এবং সবসময় হাতের কাছে রাখা প্রয়োজন। 

  • অ্যান্টিহিস্টামিন (Antihistamines): কম গুরুতর অ্যালার্জির লক্ষণগুলি (যেমন ফুসকুড়ি, চুলকানি, সর্দি) কমাতে এটি ব্যবহার করা হয়। ফেক্সোফেনাডিন, সেট্রিজিন, লোরাট্যাডিন (fexofenadine, cetirizine, loratadine) ইত্যাদি কিছু উদাহরণ। 

  • কর্টিকোস্টেরয়েড (Corticosteroids): এটি গুরুতর অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার সাথে যুক্ত ফোলাভাব (swelling) এবং প্রদাহ (inflammation) কমাতে সাহায্য করে। মৌখিক বা ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা যেতে পারে। 

শিক্ষা ও সচেতনতা (Education and Awareness)

অ্যালার্জি ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র ব্যক্তির নিজস্ব দায়িত্ব নয়, বরং সমাজ ও প্রতিষ্ঠানেরও দায়বদ্ধতা।

  • বিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং সমষ্টিগত পরিবেশে খাদ্য অ্যালার্জি (food allergy awareness) সম্পর্কে সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যক। বিদ্যালয়ের কর্মীদের এপিফাইনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টরের ব্যবহার সম্পর্কে সি-পি-ডি অ্যাক্রেডিটেড প্রশিক্ষণ (CPD-accredited training) গ্রহণ করা উচিত এবং প্রয়োজনে জীবন-হুমকির অ্যানাফিল্যাক্সিস পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। [Kitt Medical]

  • জরুরী প্রোটোকল (Emergency Protocols): ব্যক্তিগতভাবে এবং প্রতিষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট জরুরী প্রোটোকল স্থাপন করা উচিত যাতে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত ও সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

উদীয়মান থেরাপি (Emerging Therapies)

যদিও বর্তমানে কোনো নিরাময় নেই, ওরাল ইমিউনোথেরাপি (OIT) এর মতো পদ্ধতিগুলি গবেষণা ও ক্লিনিকাল ট্রায়ালে (clinical trials) রয়েছে, যা ভবিষ্যতে অ্যালার্জির স্থায়ী সমাধান দিতে পারে। এই পদ্ধতিগুলিতে, রোগীদের ক্রমবর্ধমান পরিমাণে অ্যালার্জেন খাওয়ানো হয় যাতে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সময়ের সাথে সাথে সেই খাবারের প্রতি সহনশীল হয়ে ওঠে। [Healthline]

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

৬.১. কোন ৯টি খাবারে সবচেয়ে বেশি অ্যালার্জি হয়?
সর্বাধিক ৯টি খাবারে অ্যালার্জি হয় তার মধ্যে রয়েছে গরুর দুধ (Cow’s Milk), ডিম (Eggs), গাছের বাদাম (Tree Nuts), চিনাবাদাম (Peanuts), শেলফিশ (Shellfish), গম (Wheat), সয়াবিন (Soy), মাছ (Fish) এবং তিল (Sesame)। এই খাবারগুলি বেশিরভাগ অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী।

৬.২. অ্যানাফিল্যাক্সিসের ৩টি প্রধান লক্ষণ কী?
অ্যানাফিল্যাক্সিসের ৩টি প্রধান ও জরুরি লক্ষণ হলো: শ্বাসনালীতে বাধা (যেমন: গলা বা জিহ্বা ফুলে যাওয়া), তীব্র শ্বাসকষ্ট (যেমন: শিসের মতো শ্বাস বা বুক সাঁ সাঁ করা) এবং রক্তচাপের মারাত্মক পতন (যেমন: মাথা ঘোরা, ঝিমুনি বা জ্ঞান হারানো)। এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।

৬.৩. শরীরের থেকে খাদ্যের অ্যালার্জিকে কীভাবে দূর করা যায়?
দুঃখজনকভাবে, বর্তমানে শরীরের থেকে খাদ্যের অ্যালার্জিকে সম্পূর্ণভাবে দূর করার কোনো প্রমাণিত পদ্ধতি নেই। অ্যালার্জিযুক্ত খাবার সম্পূর্ণভাবে পরিহার (complete avoidance) করাই অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। তবে, অ্যানাফিল্যাক্সিসের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে অ্যাড্রেনালিন অটো-ইনজেক্টর (epinephrine auto-injector) জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা হতে পারে, যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।

Shopping Cart
Scroll to Top