আপনার লিভার কি নীরবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে? বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ নীরবে ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, যার প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায়শই কোনও স্পষ্ট লক্ষণ থাকে না। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। সাধারণত লিভারে অল্প পরিমাণে চর্বি থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু যকৃতে চর্বি জমার পরিমাণ যখন যকৃতের মোট ওজনের ৫%-এর বেশি হয়ে যায়, তখন সেই অবস্থাকে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বা হেপাটিক স্টিটোসিস (hepatic steatosis) বলা হয়।
ফ্যাটি লিভার রোগ বিশ্বব্যাপী একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য উদ্বেগ এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। গবেষণা অনুযায়ী, দেশে সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত এই রোগে আক্রান্ত। এই রোগটি এখন আর শুধু অতিরিক্ত ওজনের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং শহুরে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে এর ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। যেহেতু এই রোগটি প্রায়শই “নীরব ঘাতক” হিসাবে কাজ করে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ দেখায় না, তাই এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং শুরুতেই সচেতন হওয়া গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ কী?
লিভার বা যকৃত মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যা শরীরের বিপাকীয় কারখানা হিসেবে কাজ করে। এর শত শত কাজের মধ্যে একটি প্রধান কাজ হলো খাবার থেকে পাওয়া পুষ্টি, বিশেষ করে চর্বি, প্রক্রিয়াজাত করা এবং শক্তি উৎপাদন করা। একটি সুস্থ লিভার রক্ত থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ দূর করে এবং শরীরে ফ্যাট মেটাবলিজম বা চর্বি বিপাকের ভারসাম্য বজায় রাখে। যখন খাদ্যাভ্যাস বা অন্য কোনো কারণে শরীর প্রয়োজনের অতিরিক্ত চর্বি উৎপাদন করে বা প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যর্থ হয়, তখন সেই অতিরিক্ত চর্বি লিভারের কোষে জমা হতে শুরু করে। এভাবেই ফ্যাটি লিভার রোগের সূচনা হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে, সম্প্রতি এই রোগের নামকরণ এবং সংজ্ঞায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা এর মূল কারণকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। যে রোগটি পূর্বে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) নামে পরিচিত ছিল, তাকে এখন মেটাবলিক ডিসফাংশন-সম্পর্কিত স্টিটোটিক লিভার ডিজিজ (MASLD) বলা হয়। একইভাবে, এর গুরুতর পর্যায়, যা পূর্বে নন-অ্যালকোহলিক স্টিটোহেপাটাইটিস (NASH) নামে পরিচিত ছিল, তার নতুন নাম মেটাবলিক ডিসফাংশন-সম্পর্কিত স্টিটোহেপাটাইটিস (MASH)। এই নতুন নামকরণ লিভারের এই অবস্থার সাথে মেটাবলিক সিন্ড্রোম (যেমন—ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা) এর সরাসরি সম্পর্ককে নির্দেশ করে, যা রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় আরও সুনির্দিষ্ট ধারণা প্রদান করে।
ফ্যাটি লিভারের প্রকারভেদ (Types of Fatty Liver Disease)
ফ্যাটি লিভার রোগ মূলত দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত, যা এর পেছনের কারণগুলোর উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। এছাড়াও একটি বিশেষ ধরনের ফ্যাটি লিভার রয়েছে যা শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায় দেখা যায়।
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) বা মেটাবলিক ডিসফাংশন-সম্পর্কিত স্টিটোটিক লিভার ডিজিজ (MASLD)
এটি ফ্যাটি লিভারের সবচেয়ে সাধারণ প্রকার। MASLD সাধারণত সেই সব ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায় যারা খুব কম পরিমাণে বা মোটেও অ্যালকোহল পান করেন না, কিন্তু তাদের লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। এই অবস্থাটি মূলত বিপাকীয় বিভিন্ন সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। এর দুটি প্রধান পর্যায় রয়েছে:
-
সাধারণ ফ্যাটি লিভার (Simple Fatty Liver বা Steatosis): এই পর্যায়ে লিভারে চর্বি জমা হয়, কিন্তু কোনো উল্লেখযোগ্য প্রদাহ বা লিভার কোষের ক্ষতি হয় না। সাধারণত এটি প্রাথমিক পর্যায় এবং খুব গুরুতর হিসেবে বিবেচিত হয় না, তবে সঠিক ব্যবস্থা না নিলে এটি পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হতে পারে।
-
নন-অ্যালকোহলিক স্টিটোহেপাটাইটিস (NASH) বা মেটাবলিক ডিসফাংশন-সম্পর্কিত স্টিটোহেপাটাইটিস (MASH): এটি MASLD-এর একটি গুরুতর রূপ। এই পর্যায়ে লিভারে চর্বি জমার পাশাপাশি প্রদাহ (inflammation) এবং লিভার কোষের ক্ষতি শুরু হয়। সময়মতো চিকিৎসা না করালে এটি ফাইব্রোসিস (লিভারে ক্ষত তৈরি), সিরোসিস বা এমনকি লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
অ্যালকোহল-সম্পর্কিত ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (AFLD)
এই ধরনের ফ্যাটি লিভার রোগ অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হয়ে থাকে। লিভারের জন্য অ্যালকোহল একটি বিষাক্ত পদার্থ, এবং অতিরিক্ত পরিমাণে এটি গ্রহণ করলে লিভারের চর্বি বিপাকের ক্ষমতা কমে যায়, ফলে কোষে চর্বি জমতে শুরু করে। এটি অ্যালকোহল-সম্পর্কিত লিভার রোগের প্রথম পর্যায়। যদি মদ্যপান অব্যাহত থাকে, তবে এটি আরও গুরুতর সমস্যা যেমন অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস (লিভারের তীব্র প্রদাহ) এবং সিরোসিসের দিকে অগ্রসর হতে পারে, যা লিভারের কার্যক্ষমতা স্থায়ীভাবে নষ্ট করে দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় তীব্র ফ্যাটি লিভার (AFLP)
এটি একটি অত্যন্ত বিরল কিন্তু মারাত্মক অবস্থা যা সাধারণত গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে বা শিশুর জন্মের ঠিক পরেই হতে পারে। এর সঠিক কারণ জানা না গেলেও, এটি মা ও শিশু উভয়ের জন্যই অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে এবং এর জন্য জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং প্রসবের ব্যবস্থা করা এর প্রধান চিকিৎসা।
ফ্যাটি লিভার রোগের পর্যায়ক্রমিক অগ্রগতি (Stages of Fatty Liver Progression)
ফ্যাটি লিভার রোগ রাতারাতি গুরুতর আকার ধারণ করে না। চিকিৎসা বা জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা না হলে এটি সময়ের সাথে সাথে বেশ কয়েকটি পর্যায়ের মাধ্যমে অগ্রসর হতে পারে, যা লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। নিচে এর চারটি প্রধান পর্যায় ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো:
-
সাধারণ ফ্যাটি লিভার (Simple Steatosis): এটি রোগের প্রথম এবং সবচেয়ে সাধারণ পর্যায়। এই ধাপে লিভারের কোষগুলোতে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়, কিন্তু সেখানে কোনো উল্লেখযোগ্য প্রদাহ বা কোষের ক্ষতি থাকে না। এই পর্যায়টি সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ নয় এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার মাধ্যমে এটিকে সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা সম্ভব।
-
স্টিটোহেপাটাইটিস (Steatohepatitis): যদি সাধারণ ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হতে পারে। এই পর্যায়ে, লিভারে অতিরিক্ত চর্বি থাকার পাশাপাশি প্রদাহও শুরু হয়। এই প্রদাহ লিভারের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। এই অবস্থাকে নন-অ্যালকোহলিক স্টিটোহেপাটাইটিস (NASH/MASH) বা অ্যালকোহলিক স্টিটোহেপাটাইটিস বলা হয়। এটি একটি গুরুতর লক্ষণ যা নির্দেশ করে যে লিভারের ক্ষতি হচ্ছে।
-
ফাইব্রোসিস (Fibrosis): লিভারে যখন দীর্ঘ সময় ধরে প্রদাহ চলতে থাকে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো নিজেদের মেরামত করার চেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়ায় লিভারে ধীরে ধীরে ক্ষত বা দাগের টিস্যু (scar tissue) তৈরি হতে শুরু করে, যাকে ফাইব্রোসিস বলা হয়। এই স্কার টিস্যু সুস্থ লিভার টিস্যুকে প্রতিস্থাপন করে, কিন্তু এটি লিভারের স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। ফলে লিভারের কার্যক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করে।
-
সিরোসিস (Cirrhosis): এটি ফ্যাটি লিভার রোগের চূড়ান্ত এবং সবচেয়ে মারাত্মক পর্যায়। ফাইব্রোসিস যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং লিভারের বেশিরভাগ অংশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই অবস্থাকে সিরোসিস বলা হয়। এই পর্যায়ে লিভার শক্ত হয়ে যায়, এর স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে যায় এবং কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। সিরোসিস থেকে লিভার ফেইলিওর, লিভার ক্যান্সার এবং অন্যান্য জীবন-হুমকির মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই পর্যায়ে পৌঁছানোর পর লিভারের ক্ষতি সাধারণত স্থায়ী এবং অপরিবর্তনীয় হয়।
ফ্যাটি লিভারের লক্ষণসমূহ (Symptoms of Fatty Liver)
ফ্যাটি লিভার রোগকে প্রায়শই “নীরব রোগ” বলা হয়, কারণ প্রাথমিক অবস্থায় এর কোনো নির্দিষ্ট বা واضح লক্ষণ দেখা যায় না। রোগের পর্যায় যত অগ্রসর হয়, লক্ষণগুলো তত স্পষ্ট হতে শুরু করে।
প্রাথমিক পর্যায়ে বা নীরব লক্ষণ (Early/Asymptomatic Stage)
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ফ্যাটি লিভারের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো ধরনের লক্ষণই অনুভব করেন না। রোগটি সাধারণত অন্য কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় ধরা পড়ে। তবে কিছু ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ ও অস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন:
-
হঠাৎ করে বা সারাক্ষণ হালকা ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা।
-
পেটের উপরের ডানদিকে, অর্থাৎ পাঁজরের ঠিক নিচে সামান্য অস্বস্তি বা হালকা ব্যথা অনুভব করা।
যেহেতু এই লক্ষণগুলো অন্য অনেক সাধারণ রোগের কারণেও হতে পারে, তাই মানুষ এগুলোকে গুরুত্ব দেন না।
গুরুতর পর্যায়ে লক্ষণ (Advanced Stage Symptoms – Fibrosis/Cirrhosis)
যখন লিভারের ক্ষতি বাড়তে থাকে এবং রোগটি ফাইব্রোসিস বা সিরোসিসের পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন বেশ কিছু গুরুতর লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই লক্ষণগুলো লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
-
হলুদ ত্বক ও চোখ: রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া, যা জন্ডিস নামে পরিচিত।
-
পেটে পানি জমা (Ascites): লিভার ঠিকমতো কাজ না করায় পেটের ভেতর তরল জমে পেট ফুলে যাওয়া।
-
পায়ে পানি জমা (Edema): শরীরের, বিশেষ করে পায়ে ও গোড়ালিতে তরল জমে ফুলে যাওয়া।
-
অতিরিক্ত চুলকানি: ত্বকের নিচে পিত্ত লবণ (bile salts) জমার কারণে শরীরজুড়ে তীব্র চুলকানি হওয়া।
-
গাঢ় রঙের প্রস্রাব: বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় প্রস্রাবের রঙ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গাঢ় হওয়া।
-
সহজেই রক্তপাত বা কালশিটে পড়া: লিভার রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি করতে না পারায় সহজেই শরীর কেটে গেলে রক্তপাত হতে পারে বা সামান্য আঘাতেই কালশিটে পড়ে যেতে পারে।
-
বিভ্রান্তি বা স্মৃতিশক্তি হ্রাস: লিভার রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ (যেমন অ্যামোনিয়া) সরাতে না পারলে তা মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে, যার ফলে মানসিক বিভ্রান্তি, মনোযোগে ঘাটতি বা স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কারণ এবং ঝুঁকির কারণ (Causes and Risk Factors)
ফ্যাটি লিভার রোগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর প্রকারভেদের ওপর ভিত্তি করে ঝুঁকির কারণগুলোও ভিন্ন ভিন্ন হয়। নিচে প্রধান কারণ এবং ঝুঁকির কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
MASLD/NAFLD-এর জন্য ঝুঁকির কারণ
মেটাবলিক ডিসফাংশন-সম্পর্কিত স্টিটোটিক লিভার ডিজিজ (MASLD), যা আগে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) নামে পরিচিত ছিল, মূলত জীবনযাত্রা এবং বিপাকীয় স্বাস্থ্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এর প্রধান ঝুঁকির কারণগুলো হলো:
-
স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন: এটি ফ্যাটি লিভারের অন্যতম প্রধান কারণ। শরীরে, বিশেষ করে পেটে অতিরিক্ত মেদ (visceral fat) জমা হলে লিভারে চর্বি জমার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
-
টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স: যখন শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দেয় না, তখন তাকে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বলে। এই অবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে শরীর বেশি ইনসুলিন তৈরি করে, যা লিভারে চর্বি জমতে সাহায্য করে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি অনেক বেশি।
-
উচ্চ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড: রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এবং ট্রাইগ্লিসারাইড (এক ধরনের চর্বি) এর মাত্রা বেশি থাকলে তা সরাসরি লিভারে চর্বি জমার ঝুঁকি বাড়ায়।
-
মেটাবলিক সিনড্রোম: এটি একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যার একটি সমন্বয়, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ রক্তে শর্করা, কোমরের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি এবং অস্বাভাবিক কোলেস্টেরলের মাত্রা। যাদের মেটাবলিক সিনড্রোম রয়েছে, তাদের MASLD হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
-
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS): PCOS থাকা মহিলাদের মধ্যে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
AFLD-এর জন্য ঝুঁকির কারণ
অ্যালকোহল-সম্পর্কিত ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (AFLD) এর মূল এবং একমাত্র কারণ হলো অতিরিক্ত মদ্যপান। অ্যালকোহল লিভারের কোষের ক্ষতি করে এবং এর চর্বি বিপাকের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। অতিরিক্ত মদ্যপানের কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা না থাকলেও, চিকিৎসকরা সাধারণত পুরুষদের জন্য সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের বেশি এবং মহিলাদের জন্য সপ্তাহে ৭ ইউনিটের বেশি মদ্যপানকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন। নিয়মিত এই পরিমাণের বেশি মদ্যপান করলে AFLD হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
অন্যান্য সাধারণ ঝুঁকির কারণ
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরও কিছু বিষয় ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে:
-
দ্রুত ওজন হ্রাস: খুব অল্প সময়ে কঠোর ডায়েট বা সার্জারির মাধ্যমে দ্রুত ওজন কমালে লিভারের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা ফ্যাটি লিভারের কারণ হতে পারে।
-
জেনেটিক্স: পরিবারের কারও, বিশেষ করে বাবা-মা বা ভাইবোনের ফ্যাটি লিভারের ইতিহাস থাকলে জিনগত কারণে অন্যদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
-
নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ, যেমন— কর্টিকোস্টেরয়েড, ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু কেমোথেরাপি এবং ট্যামক্সিফেন জাতীয় ঔষধ দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারের ফলে লিভারে চর্বি জমতে পারে।
-
সংক্রমণ: হেপাটাইটিস সি-এর মতো দীর্ঘস্থায়ী ভাইরাল সংক্রমণও লিভারে চর্বি জমার এবং প্রদাহের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।