নববিবাহিত জীবনে পদার্পণ মানে কেবল দুই মানুষের নয়, বরং দুটি পরিবারের মিলন। এটি এমন এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যেখানে প্রেম, আস্থা এবং সম্মান এক নতুন মাত্রা লাভ করে। দাম্পত্য জীবন হলো মানব সম্পর্কের সবচেয়ে গভীর এবং সুন্দর অধ্যায়, যেখানে দুইজন একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার করে এবং একে অপরের সুখ ও দুঃখের সাথী হয়। এই যাত্রার শুরুতেই দৃঢ় ও সুমধুর সম্পর্ক স্থাপন অপরিহার্য, যা ভবিষ্যতের দীর্ঘস্থায়ী বোঝাপড়া ও সম্পর্কের ভিত গড়ে তোলে।
এই নতুন যাত্রায় মানসিক ও শারীরিক ঘনিষ্ঠতা হলো সুখী দাম্পত্য জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুধুমাত্র শারীরিক নৈকট্য নয়, মানসিক নৈকট্য, আবেগ ও পারস্পরিক বোঝাপড়াই ঘনিষ্ঠতার মূল ভিত্তি। কিন্তু সমাজে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো প্রায়ই লোকলজ্জা বা ভুল ধারণার কারণে আড়াল হয়ে যায়, যা নবদম্পতির সুস্থ যৌন জীবনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। বিবাহের প্রথম সময়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ; এই সময়ে গৃহীত ইতিবাচক পদক্ষেপই দাম্পত্য সুখের দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তি তৈরি করে এবং একটি স্থিতিশীল মানসিক সংযোগ গড়ে তোলে।
প্রচলিত ভুল ধারণা ও লোকলজ্জা দূর করে পারস্পরিক বোঝাপড়ার গুরুত্ব এখানে আলোচিত হয়েছে। এই নিবন্ধটি নবদম্পতিদের এমন দিকনির্দেশনা দেবে, যা তাদের বিবাহিত জীবনকে কেবল ঘনিষ্ঠ নয়, আনন্দময় ও সমৃদ্ধ করবে, এবং নিশ্চিত করবে যে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এই যাত্রায় সমানভাবে স্বচ্ছন্দ ও পরিতৃপ্ত বোধ করছেন।
মানসিক ও আবেগিক প্রস্তুতি: বন্ধন গঠনের মূল ভিত্তি
ঘনিষ্ঠতা গড়ার প্রথম ধাপ হলো আস্থা ও সম্মান প্রতিষ্ঠা করা। নবদম্পতির জন্য, বিশেষ করে নতুন বউ-এর ক্ষেত্রে, এক নতুন পরিবারে মানিয়ে নেওয়া এবং স্বামীর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক তৈরি করা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তাই তাকে মানসিক ও আবেগিকভাবে সুরক্ষিত এবং স্বচ্ছন্দ অনুভব করানো অপরিহার্য।
এই প্রস্তুতি একতরফা নয়; স্বামীকেও তার স্ত্রীর অনুভূতি বুঝতে, সহানুভূতি দেখাতে এবং নিজের উদ্বেগ বা প্রত্যাশা সম্পর্কে খোলামেলা হতে হবে। এটি উভয়ের মধ্যে একটি দৃঢ় মানসিক সংযোগ তৈরি করে, যা যেকোনো শারীরিক সম্পর্কের চেয়েও গভীর এবং টেকসই।
নতুন বউ-এর মানসিক শান্তি এবং নিরাপত্তা বোধ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবেগ ও সহানুভূতির আদানপ্রদান তাকে বুঝতে সাহায্য করে যে সে নিরাপদ এবং তার অনুভূতির প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল। তাকে সময় দিন, মনোযোগ দিয়ে কথা শুনুন এবং তার মনের দ্বিধাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে এতে তার আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।
হালকাভাবে গল্প করুন, হাসুন, তার দৈনন্দিন জীবন বা অতীত অভিজ্ঞতা জানুন। দিনের শেষে একসাথে মানসম্মত সময় কাটানো, ছোট ছোট স্পর্শ, দীর্ঘ আলিঙ্গন এবং কপালে মৃদু চুম্বন ভালোবাসা ও যত্ন প্রকাশের সহজতম ও কার্যকর মাধ্যম। যখন এই মানসিক সংযোগ ও আবেগিক বন্ধন দৃঢ় হয়, তখন শারীরিক সম্পর্ক স্বাভাবিক, কাঙ্ক্ষিত এবং আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে। প্রতিটি স্পর্শ সর্বদা সম্মতির মাধ্যমে হওয়া উচিত, যা গভীর ভালোবাসার বার্তা বহন করে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়াকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়।
এভাবেই শারীরিক সম্পর্ক আরও গভীর এবং আনন্দময় হয়। আস্থা ও সম্মানের এই মানসিক বন্ধনই দীর্ঘমেয়াদী সুখী দাম্পত্য জীবনের শক্ত ভিত, যা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বামী-স্ত্রী উভয়কে সক্ষম করে এবং তাদের মধ্যে এক গভীর, অলঙ্ঘনীয় বন্ধন সৃষ্টি করে।
খোলামেলা যোগাযোগ: আকাঙ্ক্ষা ও সম্মতির সেতু
যেকোনো সম্পর্কের মেরুদণ্ড হলো খোলামেলা যোগাযোগ। বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রী-এর মধ্যে এ যোগাযোগ সকল সমস্যার সমাধানের মূল চাবিকাঠি। নতুন দাম্পত্য জীবনের প্রাথমিক দিনগুলোতে, বিশেষত শারীরিক ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কিত সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে আলোচনা অনেকের জন্য কঠিন বা অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। তবে এই নীরবতা কাঙ্ক্ষিত নয়; বরং নীরবতা ভাঙা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উভয়ের উচিত একে অপরের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা এবং শারীরিক সম্পর্কের আরামদায়কতার সীমা স্পষ্টভাবে বোঝা। সরাসরি কথোপকথনের পাশাপাশি শারীরিক ভাষা বা ছোট ছোট ইঙ্গিত দেখেও একে অপরের মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা উচিত।
শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন বউ-এর সম্মতি সর্বদা অগ্রাধিকার পাবে। তার মুখের কথা (verbal consent) বা শারীরিক ভাষা (non-verbal cues) দেখে ‘হ্যাঁ’ নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা একটি সম্মানজনক সম্পর্কের পরিচায়ক। শুধুমাত্র কথামাত্র নয়, তার শরীরের ভাষা—হাসিমুখে তাকানো, স্পর্শে সাড়া দেওয়া, আলতোভাবে ছোঁয়া—ও দেখুন, এগুলো তার স্বচ্ছন্দ এবং আগ্রহ বোঝায়।
নিজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা যেমন জরুরি, তেমনি তার আকাঙ্ক্ষাকেও সমান গুরুত্ব দিন এবং তাকে খোলামেলা কথা বলার জন্য উৎসাহিত করুন। এই ক্ষেত্রে প্রশ্ন করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যেমন:
-
“তোমার কেমন লাগছে?”
-
“আমরা কি আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারি?”
-
“কোনো অস্বস্তি অনুভব করছ কি?”
কেবল প্রশ্ন করলেই হবে না; তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং বোঝাতে হবে যে আপনি তার কথার গুরুত্ব দিচ্ছেন—এটাই ভালোবাসার প্রকৃত প্রমাণ। প্রতিটি আলোচনার লক্ষ্য হওয়া উচিত উভয়ের জন্য আনন্দদায়ক ও সুরক্ষিত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা, যেখানে কোনো চাপ বা ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই।
প্রশ্ন করা এবং মনোযোগ দিয়ে শোনা সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য অপরিহার্য। কার্যকর যোগাযোগ শুধুমাত্র ভুল বোঝাবুঝি কমায় না, বরং স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে গভীর আবেগিক বন্ধন ও পারস্পরিক বোঝাপড়াকে বৃদ্ধি করে। এভাবেই সম্পর্ক একটি শক্তিশালী এবং সুস্থ ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে, যা ঘনিষ্ঠতা ও ভালোবাসাকে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের দিকে চালিত করে।
শারীরিক ঘনিষ্ঠতা: ভালোবাসা ও সম্মানের ছোঁয়ায়
শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পারস্পরিক আরাম ও সম্মান। প্রথম রাত নিয়ে নানা প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারে। সামাজিক প্রথা, নাটক বা চলচ্চিত্রের রোমান্টিক চিত্রায়নের প্রভাবে অনেক নবদম্পতির মনে অযথা উদ্বেগ বা অবাস্তব প্রত্যাশা তৈরি হয়। এই রাতে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা স্থাপনের চেয়ে বেশি জরুরি হলো একে অপরের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা এবং আবেগিক সংযোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। ধীরগতি ও একে অপরকে মানসিকভাবে বোঝার মাধ্যমে শারীরিক ভাষা আবিষ্কার করা হলো বিচক্ষণতার পরিচয়, যা উভয়ের মধ্যে আস্থা ও নিরাপত্তা বোধকে দৃঢ় করে।
ধীরগতি ও পর্যায়ক্রমিক ঘনিষ্ঠতা গুরুত্বপূর্ণ। তাড়াহুড়ো করে ভালো বা দীর্ঘস্থায়ী ফল পাওয়া যায় না। শারীরিক সম্পর্কের শুরু হোক মৃদু স্পর্শ, দীর্ঘ আলিঙ্গন, উষ্ণ চুম্বন এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপচারিতার মাধ্যমে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে একে অপরের স্পর্শের সঙ্গে মানিয়ে নিতে যথেষ্ট সময় দিন। মনে রাখবেন, ভালোবাসা ও যত্ন প্রকাশের প্রাথমিক মাধ্যম হলো কোমল স্পর্শ।
পূর্বাভাস বা যৌন উদ্দীপনা শারীরিক উত্তেজনা বৃদ্ধিতে এবং উভয়ের পরিতৃপ্তি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই প্রক্রিয়ায় নতুন বউ-এর আরামদায়ক পরিবেশ এবং শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। তার অস্বস্তি বা সংকোচ বুঝলে থেমে যান এবং আশ্বস্ত করুন যে তার অনুভূতি ও আরাম আপনার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান।
পুরো প্রক্রিয়ায় স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতি ও আনন্দই একমাত্র আকাঙ্ক্ষা হওয়া উচিত, যা সুখী দাম্পত্য জীবনের ভিত গড়ে তোলে। শারীরিক সম্পর্ক কোনো প্রতিযোগিতা নয় বা কোনো গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়াহুড়ো নয়; এটি পারস্পরিক আবিষ্কার এবং গভীর অনুভূতির এক মিষ্টি অধ্যায়। এটি দাম্পত্য সুখ বৃদ্ধি করে মানসিক সংযোগকে আরও শক্তিশালী করে, যা দীর্ঘমেয়াদী বন্ধনের জন্য অপরিহার্য।
সাধারণ ভুল ধারণা ও সমাধান
নতুন দাম্পত্য জীবনে শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে অনেক ভুল ধারণা থাকে। সমাজে কিছু প্রচলিত বিশ্বাস বা ভুল ধারণা নবদম্পতিদের, বিশেষ করে পুরুষদের, শারীরিক ঘনিষ্ঠতা এবং বিবাহিত জীবন নিয়ে উদ্বেগ ও অপ্রয়োজনীয় প্রত্যাশা তৈরি করে। এই ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কের স্বাভাবিক ছন্দকে ব্যাহত করতে পারে।
এর মধ্যে অন্যতম হলো, ‘শারীরিক সম্পর্ক কেবল প্রজননের জন্য’ বা ‘প্রথম রাতেই সব কিছু স্বাভাবিকভাবে ঘটে যাওয়া উচিত’ এ ধরনের একপেশে চিন্তাভাবনা। এছাড়া শারীরিক সম্পর্ক সবসময় একইভাবে আনন্দদায়ক বা উত্তেজক হবে—এমন ভুল প্রত্যাশা অনেক সময় হতাশার জন্ম দেয়।
কিছু লোক মনে করে বৈবাহিক বাধ্যবাধকতাই সব। এই ভুল ধারণা ত্যাগ করা সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য অপরিহার্য। শারীরিক সম্পর্ক মূলত পারস্পরিক আনন্দ, ভালোবাসা এবং মানসিক সংযোগ প্রতিষ্ঠার একটি উপায়। যদি সন্তানের জন্য শারীরিক ঘনিষ্ঠতাকেই একমাত্র লক্ষ্য ধরা হয়, তবে এটি সম্পর্কের উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পরিতৃপ্তি বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
পুরুষদের মধ্যে পারফরমেন্স উদ্বেগ একটি সাধারণ সমস্যা, যা খোলামেলা যোগাযোগের মাধ্যমে সহজেই সমাধান করা যায়। মনে রাখবেন, বিবাহিত জীবন সবসময় নিখুঁত হবে—এমন কোনো কথা নেই। উভয়ের মানসিক ও শারীরিক পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে চলা এবং ধৈর্য ধরে এগিয়ে যাওয়া জরুরি। একে অপরের পছন্দ-অপছন্দকে শ্রদ্ধা জানানো দাম্পত্য সুখ বাড়াতে সাহায্য করে। যদি সমস্যা অনতিক্রম্য মনে হয়, যৌন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
এই ভুল ধারণাগুলো দূর করলে সম্পর্ক মজবুত হয়। সঠিক তথ্য, সচেতনতা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সুস্থ যৌন জীবন গড়ে তোলা সম্ভব, যা দাম্পত্য সুখ এবং দীর্ঘস্থায়ী ভালোবাসাকে বৃদ্ধি করে এবং উভয়ের মধ্যে নতুন বন্ধন প্রতিষ্ঠা করে।
সম্পর্ক পরবর্তী যত্ন ও মানসিক সংযোগ
শারীরিক সম্পর্কের পরে মানসিক সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক ঘনিষ্ঠতা কেবল একটি শারীরিক কার্যকলাপ নয়, বরং এটি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে নিবিড় মানসিক সংযোগ এবং আবেগিক বন্ধন তৈরির প্রক্রিয়া। সম্পর্কের এই সময়টি বিশেষ যত্ন দাবি করে, কারণ এটি সম্পর্ককে আরও গভীরে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। শারীরিক কার্যকলাপ শেষ হলেও একে অপরের পাশে থাকা এবং অনুভূতিগুলো ভাগ করে নেওয়া অপরিহার্য।
পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, সান্ত্বনা এবং যত্ন প্রকাশের মাধ্যমে বন্ধন আরও অটুট করা যায়। সম্পর্কের পর সঙ্গীর পাশে থাকা, আলতোভাবে স্পর্শ করা, তার চুল বা কপালে হাত বুলিয়ে দেওয়া বা আপনার গভীর অনুভূতি প্রকাশ করা তাকে বিশেষ এবং সুরক্ষিত অনুভব করাতে সাহায্য করে। ছোট ছোট প্রশংসা যেমন –
-
“তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে আমার খুব ভালো লাগে”
-
“তুমি পাশে থাকলে আমি নিরাপদ বোধ করি”
এই ধরনের আবেগপূর্ণ কথাগুলো আবেগিক বন্ধনকে মজবুত করে। খোলামেলা যোগাযোগও অব্যাহত রাখা উচিত; কেমন ছিল অভিজ্ঞতাটি, উভয়ের কেমন লাগছে—এ নিয়ে আলতোভাবে আলোচনা করা যেতে পারে, তবে কোনো প্রকার জোর করা যাবে না।
উভয়ের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং আস্থা আরও গভীর হবে যখন তারা একে অপরের যত্নে থাকা এবং সম্মানের গুরুত্ব উপলব্ধি করবে। এই যত্নশীল আচরণ দেখায় যে আপনার ভালোবাসা কেবল শারীরিক আকর্ষণের জন্য নয়, বরং আরও গভীর।
এটি দীর্ঘমেয়াদী সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য সহায়ক। শারীরিক সম্পর্ক পরবর্তী যত্ন এবং মানসিক সংযোগ দাম্পত্য সুখের স্থায়ী চাবিকাঠি। এটি প্রমাণ করে যে আপনি কেবল শারীরিক পরিতৃপ্তির দিকে মনোযোগ দেননি, বরং তার সামগ্রিক আবেগিক সুখকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন, যা একটি পূর্ণাঙ্গ বিবাহিত জীবনের জন্য অপরিহার্য।
কখন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেবেন?
যদি দাম্পত্য সুখ বা শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে কোনো উদ্বেগ বা সমস্যা দেখা দেয়, তা এড়িয়ে না গিয়ে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। নতুন দাম্পত্য জীবনের শুরুতে বা মাঝপথে বিভিন্ন কারণে সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। তবে, এই চ্যালেঞ্জ বা সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মানসিক শান্তি বিঘ্নিত করে, তখন পেশাদার বিশেষজ্ঞের সাহায্য অপরিহার্য। বিশেষত যখন আস্থা, মানসিক সংযোগ বা পারস্পরিক বোঝাপড়ায় ফাটল ধরে বা শারীরিক ঘনিষ্ঠতা কষ্টদায়ক হয়, তখন বাইরে থেকে নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিবাহ বিষয়ক পরামর্শদাতা (Marriage counselor) বা যৌন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ (Sexual health expert)-এর সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। এই বিশেষজ্ঞরা সম্পর্কের বিভিন্ন দিক—যেমন খোলামেলা যোগাযোগের অভাব, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে উদ্বেগ, যৌন আকাঙ্ক্ষার পার্থক্য, প্রত্যাশা নিয়ে ভুল ধারণা বা পারফরমেন্স সংক্রান্ত সমস্যা—সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক কারণে ঘনিষ্ঠতা জনিত সমস্যা হতে পারে; যেমন: শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন জনিত ব্যথা, পুরুষদের মধ্যে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা অন্যান্য যৌন কর্মহীনতা। এই অবস্থায় চিকিৎসক বা ইউরোলজিস্টের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জরুরি। দীর্ঘমেয়াদে সন্তান ধারণে সমস্যা থাকলে বন্ধ্যাত্ব পরীক্ষা (Infertility checks) সম্পর্কেও চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। দ্রুত সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করলে ছোট সমস্যা বড় আকার নেবে না।
পেশাদার বিশেষজ্ঞের সাহায্য গ্রহণ সুস্থ যৌন জীবন এবং সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক। এটি কোনো দুর্বলতার চিহ্ন নয়, বরং বিবাহিত জীবনকে সুরক্ষিত ও উন্নত রাখার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের দাম্পত্য সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সম্পর্কের বন্ধন আরও মজবুত হয়।
উপসংহার
সবশেষে, নতুন বউকে কিভাবে ঘনিষ্ঠ হতে হবে এর মূল চাবিকাঠি হলো ভালোবাসা এবং সম্মান। নতুন দাম্পত্য জীবন হলো এক আনন্দময় যাত্রা, যেখানে প্রতিনিয়ত একে অপরকে নতুন করে জানতে এবং আবিষ্কার করতে হয়। এই যাত্রায় শারীরিক ঘনিষ্ঠতা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি কখনো মানসিক সংযোগ, আস্থা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার গভীরতাকে ছাপিয়ে যেতে পারে না। প্রকৃত ঘনিষ্ঠতা হলো এই দুটি দিকের সুষম সমন্বয়।
পারস্পরিক বোঝাপড়া, খোলামেলা যোগাযোগ এবং স্ত্রীর স্বাচ্ছন্দ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সুখী দাম্পত্য জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব। প্রতিটি স্পর্শ ও কথায় আবেগ ও সহানুভূতি থাকা উচিত, যা দাম্পত্য সুখের বন্ধনকে অটুট রাখে। তাড়াহুড়ো বা জোর খাটিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন প্রকৃত আনন্দ দিতে পারে না; ধীরগতি ও ধৈর্যই সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি করে এবং পরিতৃপ্তি এনে দেয়। সমস্ত ভুল ধারণা এবং লোকলজ্জা ত্যাগ করে বাস্তববাদী ও ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে। পথে কোনো চ্যালেঞ্জ আসলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়াও বিচক্ষণতার পরিচয়।