পুরুষদের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম

লিঙ্গ বড় করার জন্য পুরুষদের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম ও উপকারিতা

পুরুষদের মধ্যে যৌন কর্মক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ এবং লিঙ্গের আকার নিয়ে উদ্বেগ একটি সাধারণ বিষয়। এই সমস্যার সমাধানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের কথা বলা হয়, যার মধ্যে কেগেল ব্যায়াম এবং পেনিস স্ট্রেচিং সবচেয়ে পরিচিত। তবে, এই দুটি বিষয়কে প্রায়শই এক করে দেখা হয়, যা একটি বড় ভুল।

এই আর্টিকেলে আমরা দুটি ভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব:

  1. কেগেল ব্যায়াম: যা শ্রোণী মেঝের পেশী (Pelvic Floor Muscles) শক্তিশালী করার জন্য চিকিৎসাগতভাবে স্বীকৃত এবং এর বহু প্রমাণিত স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।

  2. পেনিস স্ট্রেচিং: এটি লিঙ্গের আকার বাড়ানোর লক্ষ্যে করা হয়, যার কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাব রয়েছে এবং এতে ঝুঁকিও বিদ্যমান।

আমাদের লক্ষ্য হলো, এই দুটি পদ্ধতি সম্পর্কে একটি নিরাপদ, সৎ এবং বিশদ নির্দেশিকা প্রদান করা, যাতে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

পেলভিক ফ্লোর মাসল  কী?

শ্রোণী মেঝের পেশী বা পেলভিক ফ্লোর মাসল হলো একগুচ্ছ পেশী যা আপনার শ্রোণী অঞ্চলের নিচে জালের মতো বিস্তৃত থাকে। এই পেশীগুলো পিউবিক হাড় (সামনের দিকে) থেকে শুরু করে মেরুদণ্ডের শেষ অংশ বা টেইলবোন (পিছনের দিকে) পর্যন্ত বিস্তৃত।

এর প্রধান কাজগুলো হলো:

  • মূত্রথলি (Bladder) এবং অন্ত্র (Bowel) যথাস্থানে ধরে রাখা।

  • প্রস্রাব এবং মলত্যাগের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা।

  • যৌন ক্রিয়া, বিশেষ করে লিঙ্গ উত্থান এবং বীর্যপাতের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।

এই পেশীগুলোর মধ্যে পিউবোকোকসিজিয়াস (Pubococcygeus or PC muscle) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা কেগেল ব্যায়ামের মূল লক্ষ্য।

পুরুষদের জন্য কেগেল ব্যায়ামের চিকিৎসাগতভাবে প্রমাণিত উপকারিতা

কেগেল ব্যায়ামের নিয়মিত অনুশীলন পুরুষদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। নিচে এর প্রধান সুবিধাগুলো একটি ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো:

উপকারিতা চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত কারণ কাদের জন্য সবচেয়ে সহায়ক
মূত্র নিয়ন্ত্রণে উন্নতি এই ব্যায়াম মূত্রনালীর স্ফিঙ্কটার (Sphincter) বা ভালভকে শক্তিশালী করে, যা প্রস্রাব ঝরে পড়া রোধ করে। যাদের মূত্র অনিয়ন্ত্রণ, প্রোস্টেট অপারেশনের পর প্রস্রাব ঝরে পড়া বা ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাবের সমস্যা আছে।
মলত্যাগের নিয়ন্ত্রণ পায়ুপথের চারপাশের পেশী শক্তিশালী করে মলের অনিচ্ছাকৃত নিঃসরণ বন্ধ করে। যাদের ফেকাল ইনকন্টিনেন্স বা মল ধরে রাখতে সমস্যা হয়।
দৃঢ় লিঙ্গ উত্থান (Stronger Erections) শ্রোণী অঞ্চলের পেশী শক্তিশালী হওয়ায় লিঙ্গের গোড়ায় রক্ত ​​প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা ইরেকশনকে আরও দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী করে। যারা মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের ইরেকটাইল ডিসফাংশন (ED) সমস্যায় ভুগছেন।
বীর্যপাতের উপর নিয়ন্ত্রণ বীর্যপাতের সময় যে পেশীগুলো সংকুচিত হয়, সেগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে অকাল বীর্যপাত (Premature Ejaculation) রোধ করতে সাহায্য করে। যাদের অকাল বীর্যপাতের সমস্যা রয়েছে।
প্রোস্টেট স্বাস্থ্যের উন্নতি প্রোস্টেটাইটিস (Prostatitis) এবং বিনাইন প্রোস্ট্যাটিক হাইপারপ্লাসিয়া (BPH)-এর কারণে হওয়া ব্যথা এবং ফোলা কমাতে সাহায্য করে। প্রোস্টেটের সমস্যায় ভুক্তভোগী পুরুষদের জন্য।

সঠিকভাবে কেগেল ব্যায়াম করার পদ্ধতি: ধাপে ধাপে নির্দেশিকা

ধাপ ১: সঠিক পেশী চিহ্নিত করা

সঠিক পেশী খুঁজে বের করা এই ব্যায়ামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

  • পদ্ধতি ১: প্রস্রাব করার সময় হঠাৎ করে প্রস্রাবের ধারা বন্ধ করার চেষ্টা করুন। যে পেশীগুলো ব্যবহার করে এটি করলেন, সেটিই আপনার পেলভিক ফ্লোর মাসল। সতর্কতা: এই পদ্ধতিটি শুধুমাত্র পেশী চেনার জন্য। নিয়মিত প্রস্রাবের সময় এই ব্যায়াম করবেন না, কারণ এতে মূত্রথলির ক্ষতি হতে পারে।

  • পদ্ধতি ২: গ্যাস আটকানোর জন্য আপনি যে পেশীগুলো ব্যবহার করেন, সেগুলোই আপনার PC পেশী। সেই পেশীগুলোকেই সংকুচিত করার চেষ্টা করুন।

ধাপ ২: ব্যায়ামের সঠিক কৌশল আয়ত্ত করা

  1. শুয়ে বা বসে আরামদায়ক অবস্থানে আসুন।

  2. আপনার শ্রোণী মেঝের পেশীগুলো (PC muscles) শক্ত করে সংকুচিত করুন। ভাবুন যেন আপনি প্রস্রাব বা গ্যাস আটকে রাখছেন।

  3. এই অবস্থায় ৩ থেকে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন।

  4. এরপর পেশীগুলো ৩ থেকে ৫ সেকেন্ডের জন্য শিথিল করুন।

  5. এভাবে একবারে ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করে একটি সেট সম্পূর্ণ করুন।

ধাপ ৩: একটি নিয়মিত রুটিন তৈরি করা

  • নতুনদের জন্য: দিনে তিনবার (সকাল, দুপুর, রাত) ১০টি পুনরাবৃত্তির একটি করে সেট দিয়ে শুরু করুন।

  • অগ্রসরদের জন্য: ধীরে ধীরে সংকোচনের সময় বাড়িয়ে ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত নিয়ে যান। দিনে ৩টি সেটে ১৫-২০টি করে পুনরাবৃত্তি করার লক্ষ্য রাখুন। আপনি শোয়া, বসা বা দাঁড়ানো অবস্থাতেও এই ব্যায়াম করতে পারেন।

সাধারণ ভুল যা এড়িয়ে চলবেন:

  • ব্যায়ামের সময় শ্বাস আটকে রাখা।

  • পেট, উরু বা নিতম্বের পেশী ব্যবহার করা।

  • খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করা বা অতিরিক্ত ব্যায়াম করা।

পেনিস স্ট্রেচিং কী এবং এটি কেগেল থেকে কতটা আলাদা?

পেনিস স্ট্রেচিং হলো হাত বা ডিভাইসের মাধ্যমে লিঙ্গের টিস্যু এবং লিগামেন্ট প্রসারিত করার একটি প্রচেষ্টা, যার মূল উদ্দেশ্য লিঙ্গের আকার (দৈর্ঘ্য বা প্রস্থ) বাড়ানো।

মূল পার্থক্য:

  • কেগেল ব্যায়াম: এটি অভ্যন্তরীণ শ্রোণী মেঝের পেশীর কার্যকরী শক্তি এবং নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়।

  • পেনিস স্ট্রেচিং: এটি লিঙ্গের বাহ্যিক টিস্যুর আকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে করা হয়।

এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে পেনিস স্ট্রেচিংয়ের কার্যকারিতার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ অত্যন্ত সীমিত এবং এর সাথে বিভিন্ন ঝুঁকি জড়িত।

ম্যানুয়াল স্ট্রেচিং কৌশল (জেলকিং সহ)

তত্ত্ব: এই পদ্ধতির মূল ধারণা হলো লিঙ্গের টিস্যুতে “মাইক্রো-টিয়ার” বা ক্ষুদ্র ক্ষত তৈরি করা, যা সেরে ওঠার সময় টিস্যুগুলোকে কিছুটা বড় এবং স্ফীত করতে পারে।

নিরাপদ কৌশল (সতর্কতার সাথে):

  • আপনার লিঙ্গ যখন শিথিল (Flaccid) থাকবে, তখনই শুধুমাত্র এই ব্যায়াম করুন।
  • লিঙ্গের অগ্রভাগ (Head) আলতো করে ধরুন।
  • লিঙ্গটিকে প্রথমে সামনের দিকে টেনে ধরে রাখুন ১০ সেকেন্ড
  • এরপর ডানদিকে এবং বামদিকেও একইভাবে ১০ সেকেন্ড করে টেনে ধরুন।
  • ব্যথা বা অস্বস্তি হলে সাথে সাথে বন্ধ করুন।

জেলকিং (Jelqing): এটি একটি জনপ্রিয় ম্যানুয়াল কৌশল যেখানে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দিয়ে ‘O’ আকৃতি তৈরি করে লিঙ্গের গোড়া থেকে অগ্রভাগের দিকে আলতো চাপে ম্যাসাজ করা হয়। তবে এর কার্যকারিতা বা নিরাপত্তা নিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য গবেষণা নেই।

গবেষণা কী বলে: স্থায়ীভাবে লিঙ্গের আকার বাড়ানোর ক্ষেত্রে ম্যানুয়াল স্ট্রেচিংয়ের কার্যকারিতা নিয়ে কোনো শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। ফলাফল বেশিরভাগই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল।

মেকানিক্যাল স্ট্রেচিং ডিভাইস

  • পেনিস পাম্প (Penis Pumps):

    • কীভাবে কাজ করে: এটি একটি সিলিন্ডারের মতো চেম্বার যা লিঙ্গের উপর স্থাপন করে ভ্যাকুয়াম তৈরি করে। এই ভ্যাকুয়াম লিঙ্গের মধ্যে রক্ত ​​প্রবাহ বাড়িয়ে এটিকে অস্থায়ীভাবে উত্থিত এবং কিছুটা বড় করে।

    • কার্যকারিতা: এটি ইরেকশন অর্জনে সহায়ক হতে পারে, তবে আকার স্থায়ীভাবে বাড়ানোর কোনো প্রমাণ নেই।

    • ঝুঁকি: অতিরিক্ত ব্যবহারে রক্তনালী, স্নায়ু এবং টিস্যুর ক্ষতি হতে পারে। ৩০ মিনিটের বেশি রিং বা ক্ল্যাম্প পরে থাকা বিপজ্জনক।

  • পেনাইল ট্র্যাকশন ডিভাইস (Penile Traction Devices):

    • কীভাবে কাজ করে: এই ডিভাইসটি দীর্ঘ সময় ধরে লিঙ্গকে আলতোভাবে প্রসারিত করে রাখে।

    • কার্যকারিতা: এটি পেরোনি’স ডিজিজ (Peyronie’s disease) বা লিঙ্গের বক্রতা সারাতে চিকিৎসাগতভাবে ব্যবহৃত হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ৪-৬ ঘণ্টা ধরে টানা কয়েক মাস ব্যবহারে লিঙ্গের দৈর্ঘ্যে সামান্য (১-২ সেমি) বৃদ্ধি হতে পারে, তবে ফলাফল সবার জন্য এক নয়।

কেগেল বনাম স্ট্রেচিং এবং বিশেষজ্ঞ মতামত

দুটি পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য পরিষ্কারভাবে বুঝতে নিচের টেবিলটি দেখুন:

বৈশিষ্ট্য কেগেল ব্যায়াম পেনিস স্ট্রেচিং এবং ডিভাইস
মূল লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ শ্রোণী মেঝের পেশী (PC Muscles) লিঙ্গের টিস্যু এবং লিগামেন্ট
উদ্দেশ্য কার্যকরী শক্তি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো (যৌন ও শারীরিক) শারীরিক আকার (দৈর্ঘ্য/প্রস্থ) বাড়ানো
প্রমাণিত সুবিধা মূত্র ও মল নিয়ন্ত্রণ, ইরেকটাইল ডিসফাংশন এবং অকাল বীর্যপাতের উন্নতি। স্থায়ী আকার বৃদ্ধির জন্য চিকিৎসাগতভাবে প্রমাণিত নয়।
ঝুঁকির মাত্রা অত্যন্ত কম। মৃদু থেকে মারাত্মক (টিস্যু ড্যামেজ, ইরেকটাইল ডিসফাংশন)।
চিকিৎসকদের পরামর্শ ইউরোলজিস্টদের দ্বারা ব্যাপকভাবে সুপারিশকৃত। শুধুমাত্র পেরোনি’স ডিজিজের মতো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ব্যবহৃত হয়।

বিশেষজ্ঞ মতামত: অধিকাংশ ইউরোলজিস্ট এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কার্যকরী স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য কেগেল ব্যায়ামকে সমর্থন করেন। অন্যদিকে, পেনিস স্ট্রেচিংয়ের ক্ষেত্রে তারা এর ঝুঁকি এবং অপ্রমাণিত কার্যকারিতার কারণে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

  • যেকোনো ধরনের ব্যায়াম বা ডিভাইস ব্যবহার করার আগে একজন ইউরোলজিস্ট বা পেলভিক ফ্লোর বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের সাথে কথা বলুন।

  • যদি আপনি মূত্র অনিয়ন্ত্রণ, ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা অকাল বীর্যপাতের মতো সমস্যায় ভোগেন।

  • ব্যায়াম করার সময় বা পরে যদি ব্যথা, ফোলা, অসাড়তা বা বিবর্ণতার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।

  • হঠাৎ করে লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা বা মারাত্মক ব্যথা হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান।

চিকিৎসকের পরামর্শে বায়োফিডব্যাক (Biofeedback) বা ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন (Electrical Stimulation)-এর মতো উন্নত কৌশল ব্যবহার করে সঠিক পেশী চিহ্নিত এবং শক্তিশালী করা সম্ভব।

উপসংহার

পুরুষদের জন্য কেগেল ব্যায়াম একটি নিরাপদ, কার্যকর এবং চিকিৎসাগতভাবে সমর্থিত পদ্ধতি যা যৌন ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এর মাধ্যমে মূত্র নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে যৌন কর্মক্ষমতা পর্যন্ত অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, পেনিস স্ট্রেচিং একটি পরীক্ষামূলক পদ্ধতি যার স্থায়ী কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এবং এর সাথে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি জড়িত। আকারের চেয়ে ফাংশনকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। নিজের শরীর নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সর্বদা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নিরাপদ থাকুন।

Shopping Cart
Scroll to Top