গর্ভাবস্থা নারী জীবনে এক বিশেষ এবং অত্যন্ত সংবেদনশীল সময়। এই সময়ে শরীরের পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক ক্ষেত্রেও নানান জিজ্ঞাসা ও উদ্বেগ দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। তেমনই একটি ব্যক্তিগত এবং প্রায়শই অনুচ্চারিত বিষয় হলো গর্ভাবস্থায় সহবাস। অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে যে, এই সময়ে যৌন কার্যকলাপ কি নিরাপদ? গর্ভের শিশুর কোনো ক্ষতি হতে পারে কি? এমন নানা প্রচলিত ভুল ধারণা সমাজে বিদ্যমান থাকলেও, প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থায় সুরক্ষিত সহবাস মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকারক নয়। শারীরিক ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়াতে এবং দম্পতিদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা গর্ভকালীন সময়েও প্রয়োজন হতে পারে।
Table of Contents
Toggleএই প্রবন্ধে আমরা গর্ভাবস্থায় সহবাসের নিয়মাবলী, প্রতিটি ত্রৈমাসিকের জন্য আরামদায়ক এবং নিরাপদ বিভিন্ন পজিশন, কখন সহবাস পরিহার করা উচিত, এবং এই সময়ে সৃষ্ট সাধারণ উদ্বেগগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমাদের লক্ষ্য হলো গর্ভাবস্থায় যৌনতা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট এবং নির্ভরযোগ্য ধারণা দেওয়া, যাতে গর্ভবতী ব্যক্তি ও তাদের সঙ্গীরা আত্মবিশ্বাসের সাথে এবং সঠিক তথ্য জেনে এই সময়টি উপভোগ করতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় সহবাস কতটা নিরাপদ?
গর্ভাবস্থায় সহবাসের নিরাপত্তা নিয়ে দম্পতিদের মধ্যে প্রায়শই নানান উদ্বেগ দেখা যায়, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গর্ভকালীন সময়ে সহবাস সম্পূর্ণ নিরাপদ। শরীরের কিছু প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গর্ভের সন্তানকে যেকোনো ধরনের আঘাত থেকে সুরক্ষিত রাখে।
শিশুর প্রতিরক্ষা:
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর সন্তানকে রক্ষা করার জন্য একাধিক প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে:
জরায়ুর শক্তিশালী পেশী: গর্ভের শিশু মায়ের জরায়ুর গভীরে সুরক্ষিত থাকে। জরায়ুর দেয়াল খুব শক্তিশালী পেশী দ্বারা গঠিত, যা বাইরের সামান্য চাপ বা আঘাত থেকে শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম। সহবাসের সময় সৃষ্ট কোনো প্রকার কম্পন বা যোনিপথে প্রবেশের ফলে শিশুর কাছে পৌঁছানোর বা তাকে আঘাত করার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
অ্যামনিওটিক ফ্লুইড: জরায়ুর ভেতরে অ্যামনিওটিক থলির মধ্যে শিশু অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা এমনিওটিক তরলের মধ্যে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এই তরল একটি শক-শোষক কুশনের মতো কাজ করে। এটি শিশুর চারপাশে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে এবং মায়ের নড়াচড়া বা বাইরে থেকে আসা ছোটখাটো চাপ থেকে শিশুকে সুরক্ষা দেয়।
শ্লেষ্মা প্লাগ (Mucus Plug): জরায়ুমুখ একটি ঘন শ্লেষ্মা প্লাগ দ্বারা সিল করা থাকে। এই শ্লেষ্মা প্লাগ একটি প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে, যা জীবাণু ও সংক্রমণের প্রবেশপথ আটকে দেয় এবং জরায়ুকে বাইরের পরিবেশ থেকে রক্ষা করে। সহবাসের সময় এটি যথাস্থানেই থাকে এবং শিশুর সুরক্ষায় কোনো ব্যাঘাত ঘটায় না।
এই শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো নিশ্চিত করে যে যোনিপথে প্রবেশের ফলে বা সঙ্গমের সময় হওয়া নড়াচড়ার ফলে গর্ভের শিশুর কোনো ক্ষতি হয় না। শিশু জরায়ুর ভেতরে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকে।
সাধারণ পরিস্থিতি
যদি আপনার গর্ভাবস্থায় কোনো জটিলতা না থাকে এবং চিকিৎসক সহবাসে নিষেধ না করেন, তাহলে যৌন কার্যকলাপ সম্পূর্ণ নিরাপদ। একজন সুস্থ গর্ভবতী নারীর জন্য এবং তার অনাগত শিশুর জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় সহবাস ক্ষতিকারক নয়। গর্ভাবস্থার প্রথম থেকে তৃতীয় ত্রৈমাসিক পর্যন্ত—যে কোনো সময়েই, যদি মায়ের শরীরে কোনো বিশেষ জটিলতা না থাকে, তবে যৌন সম্পর্ক বজায় রাখা যেতে পারে।
প্রচলিত মিথ খণ্ডন
একটি অত্যন্ত প্রচলিত ভুল ধারণা হলো, গর্ভাবস্থায় সহবাস করলে গর্ভপাত বা অকাল প্রসব হতে পারে। এটি একেবারেই ভিত্তিহীন। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, একটি স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় যৌন কার্যকলাপ গর্ভপাত ঘটায় না। বেশিরভাগ গর্ভপাত হয় ভ্রূণের ক্রোমোসোমাল অস্বাভাবিকতার কারণে, যৌন কার্যকলাপের জন্য নয়। একইভাবে, স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় সহবাসের ফলে অকাল প্রসবের সম্ভাবনাও বাড়ে না। শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট জটিলতা থাকলে (যা পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে) সহবাস পরিহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কিন্তু সাধারণ অবস্থায় এসব ভয়ের কোনো কারণ নেই।
সহবাস কি প্রসব বেদনাকে প্রভাবিত করে?
গর্ভাবস্থার শেষ দিকে এসে অনেক দম্পতি চিন্তা করেন যে সহবাস করলে কি প্রসব বেদনা শুরু হতে পারে বা এর ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এমন মনে হলেও, এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ আছে, এবং সাধারণত এটি সত্যিকারের প্রসব বেদনা নয়।
ব্র্যাক্সটন হিকস সংকোচন (Braxton Hicks Contractions)
গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়গুলিতে, সহবাসের পরে বা এমনকি প্রচণ্ড উত্তেজনার পর অনেক গর্ভবতী নারী পেটে টান বা হালকা ব্যথা অনুভব করতে পারেন, যা ব্র্যাক্সটন হিকস সংকোচন নামে পরিচিত। এই সংকোচনের প্রধান কারণগুলো হলো:
অর্গাজম: যৌন উত্তেজনার চূড়ান্তে পৌঁছানোর সময় (অর্গাজম) জরায়ুর পেশীগুলিতে সংকোচন হতে পারে। এটি অনেকটা পেলভিক এলাকার মাংসপেশীর এক ধরনের ব্যায়ামের মতো। এই সংকোচনগুলি সাধারণত ক্ষণস্থায়ী এবং তীব্র নয়।
সিমেনে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন (Prostaglandins): পুরুষ সঙ্গীর সিমেনে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক একটি উপাদান থাকে। এই প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন প্রাকৃতিক রাসায়নিক, যা কিছু ক্ষেত্রে জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে। যেহেতু গর্ভাবস্থার শেষ সময়ে শরীর প্রসবের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে, তাই এই সময়ে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন জরায়ুতে সংকোচন উদ্দীপিত করতে সক্ষম। এই সংকোচনগুলিকে কখনো কখনো “ফলস লেবার” বা “মিথ্যা প্রসব বেদনা” বলা হয়।
পার্থক্য (Distinction)
এটি মনে রাখা জরুরি যে ব্র্যাক্সটন হিকস সংকোচন এবং সত্যিকারের প্রসব বেদনার মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। ব্র্যাক্সটন হিকস সংকোচন সাধারণত:
অনিয়মিত হয়।
এক স্থানে নির্দিষ্ট থাকে (যেমন, কেবল পেটের সামনের অংশে)।
তীব্রতা সময়ের সাথে সাথে বাড়ে না।
অবস্থান পরিবর্তন করলে (যেমন, হেঁটে বেড়ানো বা বিশ্রাম নেওয়া) অথবা শরীর হাইড্রেটেড থাকলে প্রায়শই কমে যায় বা চলে যায়।
অন্যদিকে, সত্যিকারের প্রসব বেদনা সাধারণত:নিয়মিত হয়।
সময়ের সাথে সাথে তীব্রতা বাড়তে থাকে।
আস্তে আস্তে পিছনের অংশ থেকে শুরু হয়ে সামনের দিকে ছড়াতে পারে।
অবস্থান পরিবর্তন করলেও কমে না।
যদি আপনার সহবাসের পরে ব্র্যাক্সটন হিকস সংকোচন শুরু হয়, তাহলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিশ্রাম নিন, জল পান করুন এবং ধীরে ধীরে হাঁটার চেষ্টা করুন। সাধারণত এই সংকোচনগুলো আপনাআপনিই চলে যায়। তবে, যদি সংকোচনগুলো তীব্র হয়, সময়ের সাথে সাথে তীব্রতা বাড়তে থাকে, নিয়মিত বিরতিতে আসে এবং চলে না যায়, বা এর সাথে রক্তপাত বা অন্য কোনো তরল বের হতে দেখেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
গর্ভাবস্থার বিভিন্ন ধাপে সহবাসের আরামদায়ক পজিশন
গর্ভাবস্থায় শারীরিক পরিবর্তনের কারণে যৌনতার ক্ষেত্রে কিছু সমন্বয়ের প্রয়োজন হতে পারে। আরাম এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
প্রতিটি ত্রৈমাসিক অনুযায়ী পজিশন ব্যাখ্যা
গর্ভাবস্থায় সহবাসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আরামকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং পেটে কোনো ধরনের চাপ এড়ানো। এমন কোনো পজিশন বেছে নেওয়া উচিত নয়, যা মায়ের অস্বস্তি সৃষ্টি করে বা পেটের উপর চাপ সৃষ্টি করে। যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া উচিত কোন পজিশনটি সবচেয়ে আরামদায়ক। প্রয়োজনে বালিশ বা কুশনের সাহায্য নিতে পারেন।
প্রথম ত্রৈমাসিক (First Trimester)
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে মায়ের পেটের আকার সাধারণত তেমন বাড়ে না, তাই এই সময়ে প্রায় সকল পজিশনই আরামদায়ক হতে পারে। এ সময়ে যৌনতার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো সীমাবদ্ধতা থাকে না। তবে, প্রথম ত্রৈমাসিকে অনেক নারী ক্লান্তি বা মর্নিং সিকনেস (Morning Sickness) অর্থাৎ সকালের বমি বমি ভাব অনুভব করতে পারেন। এই কারণে, যদি কোনো শারীরিক অস্বস্তি থাকে, তাহলে এমন সহজ পজিশন বেছে নেওয়া উচিত, যা খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না এবং মা আরাম অনুভব করেন। যেমন, সাইড বাই সাইড অথবা ম্যান অন টপ পজিশন।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (Second Trimester)
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে পেট একটু বড় হতে শুরু করে, তবে তা এখনও খুব বেশি বাধা সৃষ্টি করে না। অনেক নারীর এই সময়ে যৌন আগ্রহ (libido) বাড়তে পারে, যা শারীরিক ঘনিষ্ঠতার জন্য ইতিবাচক। এই ধাপে কিছু নির্দিষ্ট পজিশন বিশেষ আরামদায়ক হতে পারে:
ডগি স্টাইল (Doggy Style বা পেছন থেকে)
এই পজিশনে মহিলা চার হাত-পায়ে বা হাঁটুর উপর ভর করে থাকে এবং সঙ্গী পেছন থেকে প্রবেশ করেন। এটি মায়ের পেটে কোনো চাপ সৃষ্টি করে না এবং নারী নিজের আরাম অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
স্পুনিং (Spooning বা চামচ পজিশন)
এই পজিশনে দম্পতি দুজনই বিছানায় পাশাপাশি একই দিকে ফিরে শুয়ে থাকেন, অনেকটা চামচের মতো করে। সঙ্গী পেছনের দিক থেকে প্রবেশ করেন। এটি গর্ভাবস্থার ক্রমবর্ধমান পেটের জন্য অত্যন্ত আরামদায়ক এবং কোনো চাপ তৈরি করে না।
সাইড-বাই-সাইড (Side-by-Side বা পাশাপাশি)
দম্পতি একে অপরের মুখোমুখি বা এক দিকে ফিরে শুয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করে এই পজিশনটি ব্যবহার করতে পারেন। এই ক্ষেত্রেও মায়ের পেটে সরাসরি চাপ পড়ে না এবং দুইজনই আরামদায়ক অবস্থানে থাকতে পারেন।
তৃতীয় ত্রৈমাসিক (Third Trimester)
গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে, অর্থাৎ তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, পেট অনেক বড় হয়ে যায় এবং স্বাভাবিক পজিশনগুলোতে সহবাস করা কঠিন হতে পারে। এই সময়ে মায়ের আরামই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিছু পজিশন বিশেষভাবে এই সময়ে আরামদায়ক হতে পারে:
স্পুনিং (Spooning বা চামচ)
এটি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের মতোই, পেট বড় হয়ে গেলেও স্পুনিং পজিশনটি খুবই কার্যকর। নারী ও পুরুষ উভয়েই আরামদায়কভাবে শুয়ে থাকতে পারেন এবং মায়ের পেটে কোনো চাপ পড়ে না।
উওম্যান অন টপ (Woman on Top বা মহিলা উপরে)
এই পজিশনে মহিলা উপরে থাকেন, যা তাকে প্রবেশ এবং গভীরতার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেয়। যেহেতু নারী নিজের শরীরের উপর চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তাই এটি পেটে কোনো অস্বস্তি সৃষ্টি করে না এবং খুব আরামদায়ক হতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী নারী হেলান দিয়ে বা ভর দিয়ে বসতে পারেন।
সিটেড (Seated বা বসা অবস্থায়)
এই পজিশনে, হয় বিছানায় বসেই, অথবা একটি শক্ত চেয়ার বা কিনারায় বসতে পারেন, যেখানে সঙ্গীও সামঞ্জস্য রেখে বসতে পারেন। বসা অবস্থায় পেটে চাপ কম পড়ে এবং নড়াচড়ার ক্ষেত্রে নমনীয়তা পাওয়া যায়।
পিলো বা তোয়ালের সঠিক ব্যবহার
তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আরাম নিশ্চিত করতে পিলো বা তোয়ালের ব্যবহার খুবই উপকারী। তলপেট, কোমর বা নিতম্বের নিচে অতিরিক্ত সাপোর্ট হিসেবে বালিশ রাখতে পারেন। এতে নির্দিষ্ট পজিশনে মায়ের শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সুবিধা হয় এবং পেটের উপর অযথা চাপ পড়ে না, যা আরাম বৃদ্ধি করে।
কখন সহবাস এড়িয়ে চলতে হবে?
যদিও বেশিরভাগ সুস্থ গর্ভাবস্থায় সহবাস নিরাপদ, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সহবাস এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি। এই সময়গুলোতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা মা ও শিশুর নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।
চিকিৎসকের পরামর্শের গুরুত্ব:
গর্ভাবস্থায় যেকোনো ধরনের জটিলতা বা অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে আপনার ডাক্তার বা ধাত্রী (midwife) যৌন কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিতে পারেন। সব সময় আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর নির্দেশ অনুসরণ করুন। আপনার যদি কোনো উদ্বেগ থাকে বা কোনো নতুন লক্ষণ দেখা যায়, তবে দেরি না করে তাদের সাথে কথা বলুন।
নির্দিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা:
নিম্নলিখিত অবস্থাগুলো থাকলে গর্ভাবস্থায় সহবাস সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা উচিত, কারণ এগুলি মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে:
যোনিপথে রক্তপাত (Vaginal bleeding) বা কোনো অ-ব্যাখ্যাত রক্তপাত (unexplained vaginal bleeding): যদি যোনিপথ দিয়ে কোনো রকম রক্তপাত হয়, সেটি হালকা হলেও অবিলম্বে সহবাস বন্ধ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ফুটো (Leaking amniotic fluid) হওয়া বা জল ভেঙে যাওয়া (waters broken): গর্ভের চারপাশে থাকা অ্যামনিওটিক থলির তরল বের হয়ে গেলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, তাই সহবাস করা উচিত নয়।
প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া (Placenta previa): এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে গর্ভফুল (placenta) জরায়ুমুখকে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ঢেকে রাখে। এই অবস্থায় সহবাস করলে মারাত্মক রক্তপাত হতে পারে।
জরায়ুমুখের অযোগ্যতা (Cervical incompetence): যদি জরায়ুমুখ সময়ের আগেই খুলে যেতে শুরু করে, তবে সহবাস করলে সংক্রমণ বা অকাল প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
অকাল প্রসবের ইতিহাস (History of preterm labor) বা বারবার গর্ভপাতের ইতিহাস (recurrent miscarriage): যাদের অকাল প্রসবের বা বারবার গর্ভপাতের পূর্ব ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সহবাস এড়াতে বলতে পারেন।
যমজ বা একাধিক গর্ভধারণ (Multiple-birth pregnancy): যমজ বা একাধিক শিশুর গর্ভধারণের ক্ষেত্রে জটিলতার ঝুঁকি বেশি হতে পারে, তাই অনেক সময় চিকিৎসকরা সহবাসের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলেন বা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করার পরামর্শ দেন।
যৌন সংক্রামক রোগের (STIs) সুরক্ষা:
যৌন সংক্রামক রোগ (Sexually Transmitted Infections – STIs) মা এবং গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। যদি আপনার বা আপনার সঙ্গীর STIs হওয়ার ঝুঁকি থাকে বা আপনাদের মধ্যে কারো পূর্বে STI ছিল, তবে সুরক্ষিত সহবাস করা অপরিহার্য। যৌন সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে এবং শিশুর সংক্রমণ এড়াতে কন্ডম (condom) ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভাবস্থায় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
যৌন আকাঙ্ক্ষার উপর গর্ভাবস্থার প্রভাব
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর যৌন আকাঙ্ক্ষায় পরিবর্তন আসাটা খুবই স্বাভাবিক। হরমোনগত, শারীরিক এবং মানসিক বিভিন্ন কারণ এর পেছনে কাজ করে। এটি প্রতিটি নারীর জন্য ভিন্ন হতে পারে—কেউ হয়তো যৌন আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন, আবার কারো কারো যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধিও পেতে পারে।
শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন:
গর্ভাবস্থার প্রতিটি ধাপে শরীরের ভেতর ও বাইরে নানা রকম পরিবর্তন ঘটে, যা যৌন ইচ্ছার উপর প্রভাব ফেলে:
হরমোনের ওঠানামা: গর্ভকালীন সময়ে শরীরের হরমোন যেমন ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা নাটকীয়ভাবে ওঠানামা করে। এই হরমোনগুলি মেজাজ, শক্তির মাত্রা এবং যৌন ইচ্ছাকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
শারীরিক ক্লান্তি: বিশেষত প্রথম এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে শারীরিক ক্লান্তি বা ফ্যাটিগ অত্যন্ত সাধারণ। ক্লান্তি এতটাই বেশি থাকে যে, যৌন কার্যকলাপের জন্য শক্তি বা আগ্রহ অনুভব নাও হতে পারে।
বমি বমি ভাব (Nausea): প্রথম ত্রৈমাসিকের মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব কেবল সকালে নয়, দিনের যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে যৌনতায় অনীহা সৃষ্টি হতে পারে।
শরীরে নতুন আকৃতির অস্বস্তি (Body Image Concerns): গর্ভাবস্থায় নারীর শরীর পরিবর্তিত হয়। পেট বড় হয়, স্তন ভারী হয়। এই শারীরিক পরিবর্তনগুলি নিয়ে অনেকে আত্মসচেতন অনুভব করতে পারেন, যা তাদের যৌন আত্মবিশ্বাস এবং আকাঙ্ক্ষা কমিয়ে দিতে পারে।
স্তনের সংবেদনশীলতা (Breast Tenderness): গর্ভাবস্থায় স্তনগুলি খুবই সংবেদনশীল এবং কোমল হয়ে উঠতে পারে। স্তনে সামান্য স্পর্শও অনেকের জন্য অস্বস্তিকর বা বেদনাদায়ক হতে পারে, যার ফলে যৌনতার প্রতি আগ্রহ কমতে পারে।
এই সমস্ত শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণে একজন গর্ভবতী নারীর যৌন আকাঙ্ক্ষায় (sex drive) ভিন্নতা আসতে পারে—সেটা কমও হতে পারে, আবার নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে বেড়েও যেতে পারে।
সঙ্গীর উপর প্রভাব:
গর্ভাবস্থায় শুধু মায়েরই নয়, সঙ্গীর উপরও এর প্রভাব পড়ে। সঙ্গীর মধ্যে নানাবিধ অনুভূতি দেখা যেতে পারে, যা সম্পর্কের যৌন দিককে প্রভাবিত করে:
আকর্ষণ: কোনো কোনো সঙ্গীর কাছে গর্ভবতী নারী আরও বেশি আকর্ষণীয় মনে হতে পারে। আবার, কিছু সঙ্গীর মনে এমন হতে পারে যে গর্ভাবস্থার কারণে নারীর প্রতি যৌন আকর্ষণ কমে যাচ্ছে, বা তারা হয়তো মায়ের শরীর পরিবর্তন দেখে অস্বস্তিতে ভুগছেন।
উদ্বেগ: শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্গীর মনে উদ্বেগ থাকতে পারে। অনেকেই এই ভেবে চিন্তিত থাকেন যে সহবাস করলে বুঝি গর্ভের শিশুর কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে, যদিও ডাক্তার কোনো জটিলতা না থাকলে এটিকে নিরাপদ বলে মনে করেন।
যোগাযোগ (Communication):
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দম্পতিদের মধ্যে খোলামেলা যোগাযোগ। পরস্পরের ইচ্ছা ও অনুভূতি (feelings) প্রকাশ করার মাধ্যমে একে অপরের চাহিদা ও উদ্বেগগুলো বোঝা যায়। সৎ এবং আন্তরিক কথোপকথন দম্পতিদের একে অপরের প্রতি সংবেদনশীল হতে সাহায্য করে। একে অপরের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জেনে নেওয়া এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ঘনিষ্ঠতার ধরন ও ফ্রিকোয়েন্সি সামঞ্জস্য করা একটি সুস্থ ও সুসংহত সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অত্যাবশ্যক।
গর্ভাবস্থায় সহবাসের সুবিধা
গর্ভকালীন সময়ে যৌনতা শুধু নিরাপদই নয়, দম্পতি এবং অনাগত মা উভয়ের জন্যই এর অনেক ইতিবাচক সুবিধা রয়েছে। শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই এর সুফল দেখা যায়।
শারীরিক সুস্থতা (Physical Fitness):
সহবাস এক ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ। এটি ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে এবং হালকা ব্যায়ামের মতো কাজ করে শরীরকে শারীরিকভাবে সতেজ (keep fit) রাখতে ভূমিকা পালন করে। যেহেতু গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত strenuous ব্যায়াম করার সুযোগ কম থাকে, সেহেতু এই ধরনের অন্তরঙ্গ কার্যকলাপ দৈহিক স্বাস্থ্যের জন্য কিছুটা উপকারী হতে পারে।
অর্গাজমের উন্নত অভিজ্ঞতা (Enhanced Orgasms):
গর্ভাবস্থায় পেলভিক এলাকায় রক্ত প্রবাহ (increased blood flow) উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে এই সময়ে নারীরা অর্গাজম বা যৌনসুখের এক নতুন এবং আরও তীব্র অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। অনেক গর্ভবতী নারী রিপোর্ট করেছেন যে গর্ভাবস্থায় তাদের অর্গাজম বেশি গভীর এবং সন্তোষজনক ছিল।
মানসিক বন্ধন (Emotional Bonding):
যৌনতা একটি দম্পতির মধ্যে মানসিক এবং শারীরিক অন্তরঙ্গতা বাড়ানোর অন্যতম উপায়। গর্ভাবস্থার এই বিশেষ সময়ে, যখন নানা উদ্বেগ এবং পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দম্পতি যান, তখন নিয়মিত অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো একে অপরের প্রতি সহানুভূতি, ভালবাসা এবং বিশ্বাস বাড়িয়ে মানসিক বন্ধনকে (emotional bonding) আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে তোলে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি (Boosted Immune System):
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত যৌন কার্যকলাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। অর্গাজম বা যৌন মিলনের সময় শরীরে IgA অ্যান্টিবডির (antibody) মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। এই অ্যান্টিবডিগুলি ঠান্ডা লাগা (colds) এবং অন্যান্য সাধারণ সংক্রমণ (infections) প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে গর্ভবতী মা কিছু ছোটখাটো রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
সুখ ও আরাম (Happiness & Relaxation):
যৌন কার্যকলাপ এবং অর্গাজমের পর শরীর থেকে এন্ডোরফিন (endorphins) নামক প্রাকৃতিক হরমোন নিঃসৃত হয়। এই এন্ডোরফিনগুলি “সুখ হরমোন” নামে পরিচিত, যা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে এবং মেজাজ উন্নত করে। এটি মানসিক চাপ (stress reduction) কমাতে, উদ্বেগ হ্রাস করতে এবং সার্বিকভাবে ভালো বোধ করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় যেহেতু মানসিক চাপ একটি সাধারণ ব্যাপার, সেহেতু এই ধরনের শারীরিক ঘনিষ্ঠতা মনকে শান্ত ও উৎফুল্ল রাখতে সহায়তা করে।
সন্তান প্রসবের পর সহবাস (Sex after Giving Birth)
সন্তান প্রসবের পর শরীর ও মন উভয়কেই সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগে, তাই সহবাসের বিষয়ে তাড়াহুড়ো না করাই ভালো। এই সময়কাল ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
পুনরুদ্ধারের সময়কাল:
সন্তান প্রসবের পর একজন মায়ের শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে এবং হরমোনের মাত্রা পুনরায় স্থিতিশীল হতে কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শারীরিক নিরাময়:
প্রসবের ধরন অনুযায়ী নিরাময়ের সময় পরিবর্তিত হয়:
প্রসবের পর জরায়ুমুখ পুরোপুরি বন্ধ হওয়া, জরায়ুর আকার কমে যাওয়া এবং প্রসবোত্তর রক্তপাত (postpartum bleeding বা লোচিয়া) সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হতে প্রায় ৬ সপ্তাহ সময় লাগে। রক্তপাত বন্ধ হওয়ার আগে সহবাস করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যদি সি-সেকশন (C-section) অর্থাৎ অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসব হয়ে থাকে, তাহলে সার্জারির সেলাই পুরোপুরি শুকাতে এবং অভ্যন্তরীণ নিরাময়ের জন্য আরও বেশি সময় প্রয়োজন হয়। সাধারণত ৮ সপ্তাহ লাগতে পারে।
স্বাভাবিক যোনিপথে প্রসবের ক্ষেত্রে যদি যোনিপথের (vaginal tears) টিস্যুতে কোনো সেলাই দেওয়া হয়ে থাকে, তবে সেই ক্ষত পুরোপুরি নিরাময় হতেও সময় লাগে। নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত সহবাস করলে ব্যথা হতে পারে বা সংক্রমণ হতে পারে।
বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রসবের পর অন্তত ৬ সপ্তাহ অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন, যখন মায়ের শরীর প্রসবের ধাক্কা থেকে অনেকটাই পুনরুদ্ধার হয়। তবে, এই বিষয়ে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
তাই নিফাসের সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই যুক্তিযুক্ত
মানসিক প্রস্তুতি:
নতুন শিশুর আগমন নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক, কিন্তু এর সাথে আসে ঘুমহীন রাত এবং ক্লান্তি। নতুন শিশুর যত্ন, স্তন্যপান করানো এবং শারীরিক অবসাদ মায়ের যৌন আগ্রহ (sex drive) কমিয়ে দিতে পারে। এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা জরুরি। নিজেদের ইচ্ছা, অনুভূতি এবং প্রত্যাশাগুলো প্রকাশ করার মাধ্যমে আপনারা এই সময়টাকে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে উঠতে পারবেন। ইসলামিক অনুশাসন অনুযায়ী, নিফাসের (postpartum bleeding) দিনগুলো পার না হওয়া পর্যন্ত সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। নিফাসের সময়কাল শেষ হওয়ার পর শরীর সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার ও সুস্থ হয়ে গেলে, ইসলামিক বিধান অনুযায়ী আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যায়।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন? (When to Call a Doctor?)
কিছু লক্ষণ দেখা দিলে গর্ভাবস্থায় অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। এই লক্ষণগুলি সহবাসের সাথে সম্পর্কিত হোক বা না হোক, গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত।
জরুরী লক্ষণসমূহ:
অস্বাভাবিক ব্যথা (Unusual pain): যদি পেটে, পেলভিক এলাকায়, অথবা অন্য কোথাও তীব্র বা অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভব করেন, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
অতিরিক্ত রক্তপাত (Heavy bleeding): গর্ভাবস্থায় যেকোনো ধরনের অতিরিক্ত বা অনিয়মিত রক্তপাত একটি গুরুতর লক্ষণ, যার জন্য দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন।
জ্বর (Fever) বা সংক্রমণের লক্ষণ (signs of infection): উচ্চ জ্বর, শরীর ব্যথা, যোনিপথে অস্বাভাবিক স্রাব (দুর্গন্ধযুক্ত) বা চুলকানি – এই সব সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে, যা ডাক্তারকে জানাতে হবে।
জল ভেঙে যাওয়া (waters broken): যদি মনে হয় আপনার অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ফুটো হচ্ছে বা “জল ভেঙে গেছে”, অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
যে কোনো উদ্বেগ:
আপনার বা আপনার সঙ্গীর মনে গর্ভাবস্থায় সহবাস বা সামগ্রিকভাবে গর্ভকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে যদি কোনো প্রশ্ন, উদ্বেগ বা দ্বিধা থাকে, তাহলে কখনোই সংকোচ বোধ করবেন না। সরাসরি আপনার ডাক্তার, গাইনোকোলজিস্ট (OB-GYN), বা ধাত্রী (midwife) এর সাথে কথা বলুন। পেশাদার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ সবসময়ই নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রদানে সহায়তা করবে।
উপসংহার
গর্ভাবস্থা দম্পতিদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যেখানে আনন্দ, উদ্বেগ এবং নতুনত্বের মিশ্রণ থাকে। এই বিশেষ সময়ে সহবাস সম্পর্কিত সঠিক তথ্য জানা থাকা মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমরা দেখেছি যে বেশিরভাগ সুস্থ গর্ভাবস্থায় যৌনতা নিরাপদ, যদি কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। গর্ভের শিশুর শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকে এবং ভুল ধারণাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি।
গর্ভাবস্থার প্রতিটি ধাপে শরীরের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে আরামদায়ক পজিশন বেছে নেওয়া, সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করা, এবং প্রয়োজনে বালিশের সাহায্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় যৌন কার্যকলাপ শারীরিক সুস্থতা, মানসিক বন্ধন দৃঢ় করা এবং চাপ কমাতেও সাহায্য করতে পারে। তবে, যোনিপথে রক্তপাত, জল ভেঙে যাওয়া বা অন্য কোনো জটিলতা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা এবং সহবাস পরিহার করা উচিত।
মনে রাখবেন, সুস্থ সন্তান প্রসবের পর শরীরের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া এবং এই বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অপরিহার্য। দম্পতির পারস্পরিক বোঝাপড়া, আস্থা এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা অনুসরণ করাই একটি সুস্থ ও সুখী গর্ভকালীন যাত্রা নিশ্চিত করতে পারে।