
বীর্যের রং পরিবর্তন: স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক? কারণ ও করণীয়
বীর্য (Semen) সাধারণত ঘন সাদা বা হালকা ধূসর রঙের হয়ে থাকে। এটি মূলত শুক্রাণু (Sperm) এবং সেমিনাল ফ্লুইড (Seminal fluid)-এর মিশ্রণে তৈরি। তবে কখনো কখনো বীর্যের রঙে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে—যেমন লালচে, হলুদ, বাদামি বা সবুজাভ হয়ে যাওয়া—যা অনেককে চিন্তিত করে তোলে।
Table of Contents
Toggleবীর্যের রঙের পরিবর্তন আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ অবস্থা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে পারে। এটি সংক্রমণ, রক্তক্ষরণ, খাদ্যাভ্যাস, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। তবে সব ধরনের পরিবর্তন যে ভয় পাওয়ার মতো তা নয়—কিছু পরিবর্তন সাময়িক ও নিরীহ।
বীর্যের স্বাভাবিক রং ও গঠন
বীর্য হল এক ধরনের তরল যা প্রধানত শুক্রাণু (Sperm) এবং সেমিনাল ফ্লুইড (Seminal fluid) দ্বারা তৈরি। এটি পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য নিরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। স্বাভাবিক বীর্যের রং ও গঠন বুঝতে পারলে সহজেই যেকোনো অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করা যায়।
বীর্যের স্বাভাবিক রং কেমন হয়?
স্বাভাবিক বীর্য সাধারণত হালকা ধূসরাভ বা সাদা রঙের হয়ে থাকে। তবে খাবার, পানি পানের পরিমাণ, কিংবা কিছু ওষুধের কারণে রঙে সামান্য তারতম্য হতে পারে।
স্বাভাবিক বীর্যের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:
- ঘনত্ব (Consistency): নতুন বীর্য সাধারণত ঘন হয় এবং ২০–৩০ মিনিটের মধ্যে তরল হয় (liquefaction)।
- গন্ধ: একটি হালকা ক্লোরিন জাতীয় গন্ধ থাকতে পারে, যা স্বাভাবিক ধরা হয়।
- পরিমাণ: সাধারণত ২–৬ মিলিলিটার প্রতি বীর্যপাতের সময় নির্গত হয়।
- pH: সাধারণত ৭.২–৮.০ এর মধ্যে থাকে (সামান্য ক্ষারীয়)।
উদাহরণ: যদি একজন ব্যক্তি দেখতে পান বীর্য পাতলা পানির মতো হয়ে গেছে এবং একেবারেই ঘন হচ্ছে না, তবে সেটা অস্বাভাবিক হতে পারে।
বীর্যের রং পরিবর্তন কাকে বলে?
যখন বীর্যের রং স্বাভাবিক সাদা বা ধূসর থেকে অন্য রঙে পরিবর্তিত হয়, তখন সেটিকে বীর্যের রঙের পরিবর্তন বলা হয়। এটি একবারই হতে পারে বা বারবার দেখা দিতে পারে।
রঙের পরিবর্তনের সাধারণ উদাহরণ:
- লালচে বা বাদামি (রক্ত মেশানো – হেমাটোস্পার্মিয়া)
- হলদেটে (ইনফেকশন বা প্রস্রাবের সঙ্গে মিশে যাওয়া)
- সবুজাভ (ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন)
- স্বচ্ছ বা জলীয় (শুক্রাণুর ঘনত্ব কমে যাওয়া)
কখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়?
- রঙের পরিবর্তন একাধিকবার বা দীর্ঘসময় ধরে দেখা দিলে
- সঙ্গে ব্যথা, জ্বালাপোড়া, জ্বর বা প্রস্রাবে সমস্যা থাকলে
- পূর্বে যৌনবাহিত রোগ হয়েছে এমন ইতিহাস থাকলে
- বীর্য লাল বা বাদামি হয়ে ১ সপ্তাহের বেশি সময় স্থায়ী হলে
বীর্যের রঙে পরিবর্তনের ধরন ও তার অর্থ
বীর্যের রঙ পরিবর্তন বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং প্রতিটি রঙের পেছনে এক বা একাধিক সম্ভাব্য কারণ থাকে। কিছু পরিবর্তন স্বাভাবিক, আবার কিছু চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। নিচে প্রতিটি রঙের অর্থ ও সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করা হলো।
হালকা হলুদ রঙ
সম্ভবত স্বাভাবিক (দীর্ঘ সময় জমে থাকা বীর্য)
- অনেক দিন বীর্যপাত না হলে বীর্য একটু হলদেটে হয়ে যেতে পারে।
- পুরনো শুক্রাণু ও প্রোটিন জমে থাকায় রঙে এই পরিবর্তন হয়।
- সাধারণত কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
উদাহরণ: ২–৩ সপ্তাহ বীর্যপাত না হলে অনেকের বীর্য হালকা হলুদ দেখাতে পারে।
ডিহাইড্রেশন বা খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব
- পানি কম খেলে বা শরীর ডিহাইড্রেটেড হলে বীর্য ঘন ও হলুদ রঙের হতে পারে।
- রসুন, পেঁয়াজ, অ্যাসপ্যারাগাস, কিংবা ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলেও বীর্যের রঙ সাময়িকভাবে বদলে যেতে পারে।
ঘন হলুদ বা সবুজাভ রঙ
ইনফেকশন বা পুঁজের উপস্থিতি
- ইউরেথ্রা, প্রোস্টেট বা সেমিনাল ভেসিকলে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হলে বীর্যে পুঁজ মিশে সবুজ বা গাঢ় হলুদ হতে পারে।
- সাধারণত দুর্গন্ধ, জ্বালা বা ব্যথাও থাকে।
যৌনবাহিত রোগ (STD: Sexually Transmitted Disease) এর সম্ভাবনা
- গনোরিয়া বা ক্ল্যামাইডিয়ার মতো যৌনবাহিত সংক্রমণ বীর্যের রঙ বদলে দিতে পারে।
- সঙ্গে থাকে: প্রস্রাবের সময় ব্যথা, যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি।
লক্ষণগুলোর উপস্থিতি থাকলে দ্রুত যৌনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
লাল বা বাদামি রঙ
হেমাটোস্পার্মিয়া (Hematospermia: বীর্যে রক্ত)
- বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা: বীর্যে রক্তের উপস্থিতিকে হেমাটোস্পার্মিয়া বলে।
- এটি হালকা গোলাপি, লাল বা বাদামি রঙের আকারে দেখা যায়।
প্রদাহ, আঘাত বা টিউমার
- প্রোস্টেট, ইউরেথ্রা বা সেমিনাল ভেসিকলে ইনফ্ল্যামেশন (প্রদাহ) হলে রক্ত মিশে যায়।
- যৌনাঙ্গে আঘাত, বায়োপসি বা প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে।
যদি একাধিকবার বীর্যে রক্ত দেখা যায় বা বয়স ৪০ বছরের বেশি হয়, তবে অবশ্যই ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কালচে বা বাদামী বর্ণ
পুরনো রক্তের উপস্থিতি
- যদি রক্ত পুরনো হয় তবে তা বীর্যে বাদামী বা কালচে দেখাতে পারে।
- অনেক সময় পুরনো ইনফেকশন বা আগের কোন ছোট রক্তপাত এর কারণ হয়।
প্রস্রাবের পথ বা প্রোস্টেটের সমস্যার ইঙ্গিত
- প্রোস্টেটের ব্লকেজ, ইনফ্ল্যামেশন বা রক্তনালির ক্ষতি এই পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।
- সাধারণত এটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
পরিষ্কার বা পানির মতো রঙ
বীর্যের ঘনত্ব কমে যাওয়া
- যদি বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যায়, তবে তা স্বচ্ছ বা পানির মতো দেখাতে পারে।
হরমোন বা শুক্রাণুর ঘাটতি
- টেস্টোস্টেরন (Testosterone) হরমোনের ঘাটতি বা টেস্টিসের কার্যক্ষমতা কমে গেলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
- বন্ধ্যাত্ব (Infertility) সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এই লক্ষণ অনেক সময় দেখা যায়।
উদাহরণ: যারা দীর্ঘদিন স্টেরয়েড নিচ্ছেন বা পুরাতন ভেরিকোসিল আছে, তাদের বীর্য জলীয় বা খুব পাতলা হতে পারে।
বীর্যের রং পরিবর্তনের সম্ভাব্য কারণসমূহ
বীর্যের রঙ পরিবর্তনের পেছনে একাধিক শারীরিক, সংক্রামক, বা জীবনধারণ সম্পর্কিত কারণ থাকতে পারে। এই পরিবর্তন একবার ঘটলেও গুরুত্বপূর্ণ, আবার যদি নিয়মিত হতে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। নিচে সম্ভাব্য প্রধান কারণগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
সংক্রমণ (Infections)
প্রোস্টাটাইটিস, ইউরেথ্রাইটিস
- প্রোস্টাটাইটিস হল প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ, যা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হয়।
- ইউরেথ্রাইটিস হলো ইউরেথ্রা বা প্রস্রাবের নালির সংক্রমণ।
- উভয় সংক্রমণে বীর্যে পুঁজ, রক্ত বা ব্যথা দেখা যেতে পারে।
যৌনবাহিত রোগ (STIs: Sexually Transmitted Infections)
- ক্ল্যামাইডিয়া ও গনোরিয়া অন্যতম সংক্রমণ যা বীর্যের রঙে পরিবর্তন আনতে পারে।
- লক্ষণ: হলদেটে বা সবুজাভ বীর্য, প্রস্রাবে জ্বালা, যৌনাঙ্গে ব্যথা।
উদাহরণ: অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের পরে যদি বীর্য হলুদ বা গাঢ় রঙের হয়, তবে STI-এর সম্ভাবনা রয়েছে।
আঘাত বা অপারেশন
প্রস্রাবের পথ বা প্রোস্টেট গ্রন্থির আঘাত
- বাইরের আঘাত বা দুর্ঘটনায় প্রোস্টেট, ইউরেথ্রা বা সেমিনাল ভেসিকলের ক্ষতি হলে রক্ত দেখা যেতে পারে।
- এটি অস্থায়ী রঙ পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।
মেডিক্যাল প্রোসিজার: বায়োপসি, ভাসেকটমি
- প্রোস্টেট বায়োপসি বা ভাসেকটমির পর বীর্যে কয়েকদিন রক্ত থাকা স্বাভাবিক।
- ১–২ সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত স্বাভাবিক হয়ে যায়।
খাদ্যাভ্যাস ও ওষুধ
কিছু ভিটামিন বা ড্রাগের প্রভাব (যেমন: বিটা ক্যারোটিন)
- ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, বিটা ক্যারোটিন ও কিছু অ্যান্টিবায়োটিক বীর্যের রঙ বদলে দিতে পারে।
- সাধারণত ক্ষতিকর নয় এবং ওষুধ বন্ধ করলে রঙ স্বাভাবিক হয়।
অ্যালকোহল, অতিরিক্ত রেড মিট
- অতিরিক্ত মদ্যপান বা প্রোটিন বেশি গ্রহণ করলে বীর্যের রঙ ঘন ও হলুদ হতে পারে।
দীর্ঘ সময় যৌন মিলন না হওয়া
জমে থাকা বীর্যের রাসায়নিক পরিবর্তন
- দীর্ঘ সময় বীর্যপাত না হলে শুক্রাণু ও প্রোটিন জমে গিয়ে বীর্য হলুদ বা বাদামি হতে পারে।
- এটি একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন, এবং বীর্যপাতের পর আবার স্বাভাবিক রঙ ফিরে আসে।
ক্যান্সার বা টিউমার
প্রোস্টেট বা সিমিনাল ভেসিকল সম্পর্কিত টিউমার
- selten ক্যান্সার বা টিউমার থেকে ছোট ছোট রক্তনালী ফেটে গিয়ে বীর্যে রক্ত মেশে।
- এটি ধীরে ধীরে লালচে বা বাদামি রঙ তৈরি করে এবং নিয়মিত হতে পারে।
- বয়স বেশি হলে বা পরিবারের কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকলে সতর্কতা জরুরি।
কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি?
বীর্যের রঙের পরিবর্তন সাধারণত অস্থায়ী হতে পারে, তবে কখনো কখনো এটি গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। সুতরাং, কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ বা অবস্থায় ডাক্তার দেখানো জরুরি হয়ে পড়ে।
বিপদজনক লক্ষণসমূহ
বারবার রঙ পরিবর্তন
- যদি বীর্যের রঙ নিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হয়, বিশেষত লাল, বাদামি বা সবুজ হয়ে থাকে, তবে এটি কোন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
- এই ধরনের পরিবর্তন দীর্ঘসময় স্থায়ী হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ব্যথা, জ্বালা, জ্বর
- বীর্যপাতের সময় ব্যথা, জ্বালা, প্রস্রাব করার সময় অসুবিধা অথবা জ্বর অনুভূত হলে তা সংক্রমণ বা প্রদাহের লক্ষণ হতে পারে।
- এগুলো সংক্রামক রোগ বা প্রোস্টেটের সমস্যার কারণে হতে পারে।
যৌনাঙ্গে অস্বস্তি বা ফোলাভাব
- যৌনাঙ্গে অস্বস্তি বা ফোলাভাব—বিশেষত যদি এটি দীর্ঘসময় ধরে থাকে—তাহলে প্রোস্টেট বা সেমিনাল ভেসিকল সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
- এই পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কতদিন পর্যবেক্ষণ করবেন?
একাধিকবার রঙ পরিবর্তন দেখলে কিভাবে মনিটর করবেন
- যদি বীর্যের রঙ একাধিকবার পরিবর্তিত হয় এবং কোনো উপসর্গ যেমন ব্যথা বা অস্বস্তি থাকে, তবে এক সপ্তাহের মধ্যে ডাক্তার দেখানো উচিত।
- যদি রঙ পরিবর্তন সাময়িক হয় এবং কোনো গুরুতর উপসর্গ না থাকে, তবে কিছু দিন অপেক্ষা করা যেতে পারে, তবে তা এক সপ্তাহের বেশি না হওয়া উচিত।
প্রাথমিক করণীয় ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ
বীর্যের রঙে পরিবর্তন প্রতিরোধ করতে কিছু সাধারণ জীবনধারা পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যেতে পারে।
জীবনধারা পরিবর্তন
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
- প্রচুর ফল ও সবজি খান, যাতে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ থাকে।
- পানি বেশি পান করুন, যাতে শরীরের পানির অভাব না হয় এবং বীর্যের ঘনত্ব ঠিক থাকে।
পরিমিত পানি পান ও বিশ্রাম
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন, বিশেষত যদি ডিহাইড্রেশন বা শরীরের পানির ঘাটতি থাকে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি, যাতে শরীরের রিকভারি হয় এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
যৌন স্বাস্থ্যবিধি
সুরক্ষিত যৌনসম্পর্ক
- কনডম ব্যবহার করুন যাতে যৌনবাহিত রোগ (STIs) থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
- সুরক্ষিত যৌনসম্পর্কের মাধ্যমে আপনি আপনার যৌনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারবেন।
নিয়মিত যৌন স্বাস্থ্য পরীক্ষা
- যৌনবাহিত রোগ (STIs) পরীক্ষার জন্য বছরে একবার বা প্রয়োজন অনুযায়ী পরীক্ষা করানো উচিত।
- যৌনস্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি আপনার ও আপনার সঙ্গীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারবেন।
ওষুধ ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা
নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়া
- কোনো সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে, নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য কোনো ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
- একমাত্র চিকিৎসকই উপযুক্ত ওষুধ নির্ধারণ করতে পারবেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যেকোনো পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক রোগ শনাক্ত করা যেতে পারে।
- সঠিক চিকিৎসার জন্য বীর্য বিশ্লেষণ বা অন্য পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
ডায়াগনসিস ও পরীক্ষাসমূহ
বীর্যের রঙের পরিবর্তনের সঠিক কারণ জানতে কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসক এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে রোগের প্রকৃতি নির্ধারণ করবেন।
কোন পরীক্ষাগুলো দরকার হতে পারে?
বীর্য বিশ্লেষণ (Semen analysis)
- বীর্যের পরিমাণ, ঘনত্ব, শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়।
- এই পরীক্ষাটি বন্ধ্যাত্বের কারণ বা শুক্রাণুর কোনো সমস্যা চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
আলট্রাসোনোগ্রাফি (Ultrasound)
- প্রোস্টেট, সেমিনাল ভেসিকল বা ইউরেথ্রার কোনো সমস্যা শনাক্ত করতে আলট্রাসোনোগ্রাফি করা হতে পারে।
STI panel
- যৌনবাহিত রোগের উপস্থিতি চেক করতে বিভিন্ন ধরনের STI পরীক্ষা করা হয়, যেমন গনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া, সিফিলিস, ইত্যাদি।
PSA টেস্ট (Prostate-Specific Antigen Test)
- প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে PSA টেস্ট করা হয়। এটি প্রোস্টেটের সমস্যা বা টিউমার শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
বীর্যের রঙের পরিবর্তন যদি কোনো শারীরিক বা সংক্রমণজনিত সমস্যার কারণে হয়ে থাকে, তবে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সমস্যার জন্য আলাদা আলাদা চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে।
সংক্রমণজনিত চিকিৎসা
অ্যান্টিবায়োটিক ও এন্টিভাইরাল
- অ্যান্টিবায়োটিক: ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যেমন প্রোস্টাটাইটিস বা ইউরেথ্রাইটিসের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
- এন্টিভাইরাল: যদি যৌনবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ (যেমন: হারপিস) হয়ে থাকে, তবে এন্টিভাইরাল চিকিৎসা দেয়া হয়।
উদাহরণ: গনোরিয়া বা ক্ল্যামাইডিয়ার মতো যৌনবাহিত রোগের চিকিৎসায় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়।
এটি ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত হয় এবং পুরো কোর্স শেষ করা জরুরি।
হরমোনাল বা শারীরিক সমস্যা
হরমোন থেরাপি
- টেস্টোস্টেরন (Testosterone) এর অভাব বা শারীরিক অক্ষমতার কারণে যদি বীর্যের রঙ পরিবর্তিত হয়ে থাকে, তবে হরমোন থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে।
- এই থেরাপি শুক্রাণুর উৎপাদন বাড়াতে এবং বীর্যের গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
সার্জারির প্রয়োজনীয়তা
- যদি প্রোস্টেট বা সেমিনাল ভেসিকলে কোনো টিউমার, ব্লকেজ বা প্রদাহ থাকে, তবে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
- এছাড়া ভাসেকটমি বা বায়োপসি পরবর্তী সময়ে রঙ পরিবর্তন ঘটাতে পারে, তবে এটি চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করা হয়।
- উদাহরণ: প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে, যা বীর্যের রঙ পরিবর্তন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
বিকল্প চিকিৎসা ও ফলোআপ
হোম রেমেডি নয়, বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা
- হোম রেমেডি বা কোনো অপ্রমাণিত চিকিৎসা গ্রহণ করার থেকে বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা অনুসরণ করা উচিত।
- অনেকে ঘরোয়া উপায়ে বীর্যের রঙ পরিবর্তন চিকিৎসার চেষ্টা করেন, তবে সেগুলি বিপজ্জনক হতে পারে এবং প্রকৃত সমস্যার সমাধান না হয়ে আরও জটিলতা তৈরি করতে পারে।
পর্যবেক্ষণ ও রেগুলার ফলোআপের গুরুত্ব
- একবার চিকিৎসা শুরু হলে, রোগীর নিয়মিত ফলোআপ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বীর্যের রঙ পুনরায় পর্যবেক্ষণ করা এবং যদি সমস্যা আবারও দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে ফিরে আসা উচিত।
উদাহরণ: যদি বীর্যের রঙ বদলানোর পর এক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক না হয়, তবে পুনরায় পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
উপসংহারঃ
বীর্যের রং পরিবর্তন সবসময় ভয়ের নয়, তবে এটি শরীরের কোনো সমস্যা বা সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে, তাই সতর্কতা জরুরি। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং সময়মতো চিকিৎসা নিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেরে ওঠা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সুরক্ষিত যৌনসম্পর্ক এবং সচেতনতা-ই সুস্থ যৌন জীবনের চাবিকাঠি। এর মাধ্যমে আপনি আপনার যৌনস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারবেন এবং দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারবেন।