খাদ্য অ্যালার্জি

খাদ্য অ্যালার্জি: লক্ষণ, কারণ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ

খাদ্য অ্যালার্জি হলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অস্বাভাবিক ও অত্যধিক প্রতিক্রিয়া, যেখানে শরীর কিছু নির্দিষ্ট খাবারকে ভুলবশত ক্ষতিকর বা “আক্রমণকারী” বলে মনে করে এবং সেগুলিকে অপসারণের জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এই আক্রমণ বিভিন্ন ধরণের অস্বস্তিকর এবং কখনো জীবন-হুমকির সম্মুখীনকারী লক্ষণ তৈরি করতে পারে। অনেক সময় খাদ্য অসহিষ্ণুতাকে (food intolerance) খাদ্য অ্যালার্জির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়, যা দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়া, যদিও লক্ষণগুলির মধ্যে কিছুটা মিল থাকতে পারে। খাদ্য অসহিষ্ণুতায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জড়িত থাকে না, পক্ষান্তরে খাদ্য অ্যালার্জিতে সরাসরি জড়িত থাকে।

Table of Contents

এই বিস্তারিত নিবন্ধটি খাদ্য অ্যালার্জির গভীরতম দিকগুলি অন্বেষণ করবে – এর পেছনের সুনির্দিষ্ট ইমিউনোলজিক্যাল কারণ থেকে শুরু করে এটি কিভাবে নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা হয়, কী কী অত্যাধুনিক চিকিৎসা বিদ্যমান এবং কীভাবে এর থেকে নিজেকে ও প্রিয়জনদেরকে রক্ষা করা যায়। প্রতিটি বিভাগই প্রতিযোগিতামূলক নথিগুলির থেকে আরও বেশি গভীরতা এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে, বিশেষত ইমিউনোলজিক্যাল প্রক্রিয়া, অ্যালার্জির ধরন, আইনগত দিকনির্দেশনা, এবং প্রারম্ভিক পরিচর্যা সংক্রান্ত তথ্যগুলিতে আলোকপাত করা হবে।

খাদ্য অ্যালার্জি কি?

খাদ্য অ্যালার্জি হলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি জটিল প্রক্রিয়া যেখানে খাদ্য কণা, সাধারণত প্রোটিন, অ্যালার্জেন হিসেবে চিহ্নিত হয়। যখন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনো নির্দিষ্ট খাদ্য প্রোটিনকে ভুলবশত ক্ষতিকর হিসাবে চিহ্নিত করে, তখন এটি ইমিউনোগ্লোবুলিন ই (IgE) নামক বিশেষ অ্যান্টিবডি তৈরি করে। পরবর্তীতে সেই একই খাবার পুনরায় গ্রহণ করা হলে, এই IgE অ্যান্টিবডিগুলি অ্যালার্জেনকে সনাক্ত করে এবং শরীরের কোষগুলিকে, বিশেষ করে মাস্ট সেল (mast cells) ও বেসোফিলকে (basophils), হিস্টামিন ও অন্যান্য ইনফ্ল্যামেটরি রাসায়নিক নির্গত করার সংকেত দেয়। এই রাসায়নিকগুলি রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে অ্যালার্জির বিভিন্ন পরিচিত লক্ষণ সৃষ্টি করে।

খাদ্য অ্যালার্জি বনাম খাদ্য অসহিষ্ণুতা:

  • খাদ্য অ্যালার্জি:

    • এটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সরাসরি সম্পৃক্ততা ঘটায় (IgE mediated)।

    • খুব সামান্য পরিমাণ খাদ্য কণা থেকেও গুরুতর বা প্রাণঘাতী প্রতিক্রিয়া (যেমন অ্যানাফাইল্যাক্সিস) সৃষ্টি হতে পারে।

    • প্রতিক্রিয়া সাধারণত কয়েক মিনিট থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে দ্রুত শুরু হয়।

    • লক্ষণে সাধারণত ত্বকের চুলকানি, আমবাত, ফোলাভাব, শ্বাসকষ্ট, এবং রক্তচাপ কমে যাওয়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে।

  • খাদ্য অসহিষ্ণুতা:

    • এটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সরাসরি সম্পৃক্ততা ঘটায় না। এর মূল কারণ হজমের দুর্বলতা বা এনজাইমের অভাব।

    • সাধারণত ছোট থেকে মাঝারি পরিমাণে খাবার গ্রহণ করলে লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে, কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।

    • প্রতিক্রিয়া সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং হজমের অস্বস্তি (যেমন গ্যাস, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া) প্রধান থাকে।

    • জীবন-হুমকির সম্মুখীনকারী প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত বিরল।

খাদ্য অ্যালার্জির লক্ষণ

খাদ্য অ্যালার্জির লক্ষণগুলো হালকা থেকে গুরুতর, এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে। কিছু ব্যক্তির জন্য, একটি নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া অস্বস্তিকর হতে পারে কিন্তু গুরুতর নয়। অন্যদের জন্য, এটি খুবই ভয়ংকর এবং জীবন-হুমকির সম্মুখীনকারী হতে পারে। খাদ্য অ্যালার্জির লক্ষণগুলি সাধারণত আপত্তিকর খাবার খাওয়ার কয়েক মিনিট থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে দেখা দেয়। তবে, বিরল ক্ষেত্রে, লক্ষণগুলি শুরু হতে কয়েক ঘন্টা বিলম্বিতও হতে পারে (যেমন FPIES)।

ক. ত্বকের লক্ষণ (Cutaneous Symptoms):

  • আর্টিকেরিয়া বা আমবাত (Urticaria/Hives): ত্বক জুড়ে লালচে, চুলকানিযুক্ত চাকা চাকা র‍্যাশ, যা হঠাৎ করে দেখা দেয় এবং মিলিয়ে যায়। এটি ত্বকের একটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া।

  • একজিমা (Eczema/Atopic Dermatitis): বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেখানে ত্বক শুষ্ক, চুলকানিযুক্ত, লাল এবং ফোসকা হতে পারে। এটি খাদ্য অ্যালার্জির একটি দীর্ঘস্থায়ী লক্ষণ।

  • ত্বকের চুলকানি (Itchy skin): শরীরের যেকোনো অংশে, বিশেষ করে মুখে, হাত-পায়ে তীব্র চুলকানি অনুভব করা।

  • অ্যাঞ্জিওএডিমা (Angioedema): ঠোঁট, মুখ, জিভ, গলা ও চোখের পাতায় গুরুতর ফোলাভাব, যা ব্যথাযুক্ত এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

খ. হজমতন্ত্রের লক্ষণ (Gastrointestinal Symptoms):

  • বমি ও বমি বমি ভাব (Vomiting & Nausea): অ্যালার্জিক খাবার খাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে তীব্র বমি হতে পারে।

  • পেটে ব্যথা ও ক্র্যাম্পিং (Abdominal pain & Cramping): পেটে তীক্ষ্ণ ব্যথা বা মোচড় অনুভব করা।

  • ডায়রিয়া (Diarrhea): বার বার পাতলা পায়খানা হওয়া।

  • শিশুদের ক্ষেত্রে রক্ত মিশ্রিত মল (Bloody stools): এটি Food Protein-Induced Enterocolitis Syndrome (FPIES) এর একটি লক্ষণ হতে পারে।

গ. শ্বসনতন্ত্রের লক্ষণ (Respiratory Symptoms):

  • শ্বাসকষ্ট ও বুকে টান ধরা (Shortness of breath & Chest tightness): শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া এবং বুকে চাপ অনুভব করা।

  • হুইজিং (Wheezing): শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় সাঁই সাঁই শব্দ হওয়া, যা হাঁপানির (asthma) মতো শুনাতে পারে।

  • বারবার কাশি (Repetitive cough): অবিরাম কাশি যা শ্বাসতন্ত্রের অস্বস্তি নির্দেশ করে।

  • নাক বন্ধ (Nasal congestion), হাঁচি ও সর্দি (Sneezing & Runny nose): ঠান্ডা লাগার মতো লক্ষণ, কিন্তু অ্যালার্জির কারণে হয়।

  • গলায় টাইট লাগা বা স্বর বসে যাওয়া (Tight/Hoarse throat): গলায় সংকোচনের অনুভূতি এবং কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসা, যা গিলতে অসুবিধা (trouble swallowing) তৈরি করতে পারে।

ঘ. অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ (অ্যানাফাইল্যাক্সিস – Anaphylaxis):

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে, খাদ্য অ্যালার্জি একটি মারাত্মক অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে যাকে অ্যানাফাইল্যাক্সিস বলা হয়। অ্যানাফাইল্যাক্সিস হলো একটি জীবন-হুমকির সম্মুখীনকারী পূর্ণাঙ্গ শরীরের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া, যা দ্রুত শ্বাসনালীকে সংকুচিত করে, রক্তচাপের মারাত্মক পতন (শক), এবং হৃদস্পন্দনকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসে তীব্র বাধা সৃষ্টি হয়, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে গুরুতর ফোলা দেখা দেয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি সংজ্ঞাহীন হয়ে যেতে পারে।

  • অ্যানাফাইল্যাক্সিসের বৈশিষ্ট্য:

    • শ্বাস-প্রশ্বাসে মারাত্মক বাধা: শ্বাসনালী সঙ্কুচিত হয়ে যায় বা গলায় একটি মাংসের পিন্ড আটকে আছে এমন অনুভূতি, শ্বাসপ্রশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা।

    • রক্তচাপের তীব্র পতন (Hypotensive Shock): শরীর হঠাৎ করে প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে যায়, ত্বক ফ্যাকাসে বা নীল হয়ে যায় এবং দ্রুত হৃদস্পন্দন সহ শক লেগে রক্ত সঞ্চালন বিপর্যস্ত হয়।

    • তীব্র মাথা ঘোরা বা জ্ঞান হারানো (Severe Dizziness/Loss of Consciousness)।

    • প্রাণনাশের ভয় বা আসন্ন বিপদের অনুভূতি (Feeling of Impending Doom)।

    • প্রতিক্রিয়া এক বা একাধিক অঙ্গে একসাথে হতে পারে, যেমন: পেটে ব্যথা সহ ত্বকের ফুসকুড়ি।

  • অ্যানাফাইল্যাক্সিসের টাইমলাইন: বেশিরভাগ খাদ্য-সম্পর্কিত লক্ষণ সাধারণত খাদ্য গ্রহণের দুই ঘন্টার মধ্যে দেখা যায়; প্রায়শই কয়েক মিনিটের মধ্যে শুরু হয়। কিছু খুব বিরল ক্ষেত্রে, প্রতিক্রিয়া চার থেকে ছয় ঘন্টা বা তারও বেশি সময় ধরে বিলম্বিত হতে পারে।

খাদ্য অ্যালার্জির কারণ

খাদ্য অ্যালার্জি ঘটে যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (immune system) একটি নির্দিষ্ট খাবার বা খাবারের মধ্যে থাকা একটি পদার্থকে ক্ষতিকারক হিসাবে ভুল করে। এই ভুল শনাক্তকরণের ফলে ইমিউন সিস্টেম কিছু রাসায়নিক নির্গত করে, যা অ্যালার্জির লক্ষণ সৃষ্টি করে।

ক. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া (Immune System Response):

  • অ্যান্টিবডি ইমিউনোগ্লোবুলিন ই (IgE) উৎপাদন: যখন প্রথমবার কোনো ক্ষতিকর খাদ্য প্রোটিন (অ্যালার্জেন) শরীরে প্রবেশ করে, তখন শ্বেত রক্তকণিকা (B cells) এর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে ইমিউনোগ্লোবুলিন ই (IgE) নামক এক ধরণের অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই IgE অ্যান্টিবডিগুলি মাস্ট কোষের (mast cells) সাথে যুক্ত হয়, যা ত্বক, ফুসফুস এবং হজমতন্ত্রে প্রচুর পরিমাণে থাকে।

  • হিস্টামিন ও অন্যান্য প্রদাহ সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের নির্গমন: পরবর্তীকালে, যখন সেই একই অ্যালার্জেন শরীরে প্রবেশ করে, তখন তা সরাসরি মাস্ট কোষে যুক্ত IgE অ্যান্টিবডিগুলিকে সক্রিয় করে তোলে। এই সক্রিয়তার ফলস্বরূপ মাস্ট কোষ থেকে হিস্টামিন (Histamine) এবং লিউকোট্রিনস (Leukotrienes) এর মতো শক্তিশালী রাসায়নিকগুলি দ্রুত নির্গত হয়। এই রাসায়নিকগুলি রক্তপ্রবাহে ছড়িয়ে পড়ে এবং উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন ধরণের অ্যালার্জির লক্ষণ (যেমন রক্তনালীর প্রসারণে ফোলাভাব, ব্রঙ্কোকনস্ট্রিকশনে শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) সৃষ্টি করে।

খ. সাধারণ অ্যালার্জেনিক খাদ্য (Common Allergenic Foods):

যে কোনো খাবারই অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে, তবে বিশ্বের ৯৫ শতাংশের বেশি খাদ্য অ্যালার্জির জন্য নয়টি প্রধান খাবারের গ্রুপ দায়ী। এই অ্যালার্জেনগুলি শিশুর দুধ ছাড়ানোর সময় থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।

  • দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য (Milk and Dairy products): এটি শিশুদের সবচেয়ে সাধারণ অ্যালার্জিগুলির মধ্যে একটি, সাধারণত শিশুদের গরুর দুধের প্রোটিন (casein and whey) থেকে হয়।

  • ডিম (Eggs): বিশেষ করে ডিমের সাদা অংশে থাকা প্রোটিন অ্যালার্জির কারণ হতে পারে, যদিও হলুদ অংশও দায়ী হতে পারে।

  • চিনাবাদাম (Peanuts): চিনাবাদামের অ্যালার্জি বেশ গুরুতর এবং সাধারণত সারাজীবন থাকে।

  • ট্রি নাটস (Tree nuts): এটি চিনাবাদাম থেকে ভিন্ন। কাঠবাদাম (Almonds), আখরোট (Walnuts), কাজুবাদাম (Cashews), পেস্তা (Pistachios), পেকান (Pecans), ব্রাজিল নাটস (Brazil nuts) এবং হ্যাজেলনাট (Hazelnuts) এই গোত্রের প্রধান সদস্য। এক ধরনের ট্রি নাটে অ্যালার্জি থাকলে অন্যগুলোতেও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

  • মাছ (Fish): বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে।

  • শেলফিশ (Shellfish): এটিও বেশ গুরুতর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একটি সাধারণ অ্যালার্জেন। এর মধ্যে চিংড়ি (Shrimp), কাঁকড়া (Crab), লবস্টার (Lobster) এবং ঝিনুক (Molluscs) অন্তর্ভুক্ত।

  • গম (Wheat): গম বা গমের প্রোটিন গ্লুটেন-এর প্রতি প্রতিক্রিয়া, যা বিভিন্ন পাউরুটি ও বিস্কিটে পাওয়া যায়। সিলিয়াক রোগের সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবে না, এটি একটি IgE-মধ্যস্থ প্রতিক্রিয়া।

  • সয়াবিন (Soy): সয়াবিনের প্রোটিন অনেক প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ব্যবহৃত হয় এবং শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির একটি সাধারণ কারণ।

  • তিল (Sesame): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের FASTER Act of 2021 আইনানুযায়ী ১ জানুয়ারি ২০২৩ সাল থেকে তিলকে নবম প্রধান খাদ্য অ্যালার্জেন হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এটি অনেক জনপ্রিয় খাবার, যেমন হুমমাস (Hummus)-এর অন্যতম উপাদান তাহিনিতে (Tahini) বিদ্যমান। আগে লেবেলে এর উল্লেখ বাধ্যতামূলক ছিল না, যা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

বিভিন্ন ধরণের খাদ্য প্রতিক্রিয়া (Detailed):

  • খাদ্য প্রোটিন-প্ররোচিত এন্টারোকোলাইটিস সিন্ড্রোম (Food Protein-Induced Enterocolitis Syndrome – FPIES):

    • এটি এক ধরণের বিরল, অ-IgE মধ্যস্থ খাদ্য অ্যালার্জি, যা সাধারণত ছোট শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, বিশেষ করে যারা নতুন করে কঠিন খাবার খাওয়া শুরু করেছে বা বুকের দুধ ছাড়ছে।

    • কার্যপদ্ধতি: এতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার T কোষ এবং হজমতন্ত্রের টিস্যুর প্রতিক্রিয়া জড়িত, কিন্তু IgE অ্যান্টিবডির ভূমিকা নেই।

    • লক্ষণ: খাদ্য গ্রহণের ২ থেকে ৬ ঘন্টা পর তীব্র বমি, বারবার ডায়রিয়া এবং পানিশূন্যতা দেখা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর ক্লান্তি এবং রক্তচাপের পতন হতে পারে। এটি ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের মতো দেখতে হতে পারে, যা রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব ঘটাতে পারে। FPIES একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি যার জন্য শিরায় ফ্লুইড দেওয়া (IV rehydration) প্রয়োজন।

  • ইওসিনোফিলিক ইসোফ্যাগাইটিস এবং ইওসিনোফিলিক গ্যাস্ট্রাইটিস (Eosinophilic Esophagitis and Eosinophilic Gastritis):

    • এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী ইমিউন প্রতিক্রিয়া যেখানে খাদ্যনালীতে (Esophagus) বা পাকস্থলীতে (Stomach) ইওসিনোফিল নামক শ্বেত রক্তকণিকার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে, যা খাবারের প্রতি দীর্ঘস্থায়ী সংবেদনশীলতার ফল।

    • লক্ষণ: এর সাধারণ লক্ষণগুলি হলো গিলতে অসুবিধা, বুকজ্বালা, পেটে ব্যথা, বমি, এবং খাদ্যের আটকে যাওয়ার অনুভূতি। এটি শুধুমাত্র একটি অ্যালার্জির ঘটনা নয়, একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ।

  • পোলেন-খাদ্য অ্যালার্জি সিন্ড্রোম (Pollen-Food Allergy Syndrome / Oral Allergy Syndrome – OAS):

    • অনেক পরাগরেণু অ্যালার্জিতে (যেমন হে ফিভার) আক্রান্ত ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট কিছু কাঁচা ফল, সবজি, বাদাম বা মশলা খেলে মুখে চুলকানি, জিহ্বা ফুলে যাওয়া, বা গলা চুলকানোর মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এটি খাদ্য অ্যালার্জি নয়, বরং পোলেন অ্যালার্জির একটি উপসর্গ।

    • কারণ: পরাগরেণুতে থাকা কিছু প্রোটিনের সাথে এই কাঁচা খাবারের প্রোটিনগুলির কাঠামোগত মিল থাকে (cross-reactivity)। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই প্রোটিনগুলিকে একই রকম ভাবে শনাক্ত করে প্রতিক্রিয়া দেখায়।

    • বিশেষত্ব: এই প্রতিক্রিয়াগুলি সাধারণত তীব্র হয় না এবং খাবার রান্না করা হলে অ্যালার্জেন প্রোটিনগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

টেবিল: পরাগরেণু এবং ক্রস-রিঅ্যাক্টিভ খাবার

যদি আপনি এর প্রতি অ্যালার্জিক হন সম্ভাব্য ক্রস-রিঅ্যাক্টিভ খাবার
বিচ পোলেন (Birch pollen) কাঠবাদাম (Almond), আপেল (Apple), অ্যাপ্রিকট (Apricot), গাজর (Carrot), সেলারি (Celery), চেরি (Cherry), হ্যাজেলনাট (Hazelnut), পিচ (Peach), চিনাবাদাম (Peanut), নাশপাতি (Pear), কিসমিস (Plum), কাঁচা আলু (Raw Potato), সয়াবিন (Soybean), কিছু গুল্ম এবং মশলা (অ্যানিস, ক্যারোয়ে বীজ, ধনে, মৌরি, পার্সলে, সরিষা, কালো গোলমরিচ)।
রাগউইড পোলেন (Ragweed pollen) কলা (Banana), শসা (Cucumber), তরমুজ (Melon – Cantaloupe, Honeydew, Watermelon), জুকিনি (Zucchini)।
ঘাস (Grasses) কিউই (Kiwi), তরমুজ (Melon), কমলা (Orange), চিনাবাদাম (Peanut), টমেটো (Tomato), সাদা আলু (White Potato), জুকিনি (Zucchini)।
ম্যাগওয়ার্ট পোলেন (Mugwort pollen) আপেল (Apple), বেল মরিচ (Bell Pepper), ব্রোকলি (Broccoli), বাঁধাকপি (Cabbage), গাজর (Carrot), ফুলকপি (Cauliflower), সেলারি (Celery), রসুন (Garlic), পেঁয়াজ (Onion), পিচ (Peach), কিছু গুল্ম এবং মশলা (অ্যানিস, কালো গোলমরিচ, ক্যারোয়ে বীজ, ধনে, মৌরি, সরিষা)।
  • ব্যায়াম-প্ররোচিত খাদ্য অ্যালার্জি (Exercise-Induced Food Allergy):

    • এটি একটি বিরল অ্যালার্জি যেখানে নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার পর ব্যায়াম করলে লক্ষণ দেখা দেয়।

    • লক্ষণ: কিছু খাবার খাওয়ার পর ব্যায়াম শুরু করলে ব্যক্তিরা চুলকানি, মাথা ঘোরানো বা অ্যানাফাইল্যাক্সিসও অনুভব করতে পারে।

    • প্রতিরোধ: এই সমস্যা এড়াতে ব্যায়ামের কয়েক ঘণ্টা আগে নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনিক খাবার পরিহার করা উচিত।

খাদ্য অ্যালার্জির ঝুঁকির কারণ

কিছু কারণ আপনার বা আপনার সন্তানের খাদ্য অ্যালার্জির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

  • পারিবারিক ইতিহাস (Family history): আপনার যদি পরিবারের কোনো সদস্যের (মা, বাবা বা ভাই-বোন) অ্যালার্জি, হাঁপানি, একজিমা, অথবা হে ফিভার (hay fever) এর ইতিহাস থাকে, তবে আপনার খাদ্য অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

  • অন্যান্য অ্যালার্জি (Other allergies): আপনার যদি ইতিমধ্যেই অন্য কোনো খাবারের প্রতি অ্যালার্জি থাকে, তবে আরেকটি নতুন অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। একইভাবে, হে ফিভার বা একজিমা-এর মতো অন্যান্য ধরনের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া থাকলে খাদ্য অ্যালার্জির ঝুঁকি বেশি হয়।

  • বয়স (Age): খাদ্য অ্যালার্জি শিশু এবং বাচ্চাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, কারণ তাদের হজমতন্ত্র এখনো পুরোপুরি বিকশিত থাকে না এবং ইমিউন সিস্টেম সংবেদনশীল হয়। সাধারণত শিশুদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে (বিশেষ করে ৬ বছর বয়সের মধ্যে), তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পরিপক্ক হওয়ায় দুধ, ডিম, গম এবং সয়াবিনের প্রতি অ্যালার্জি ঠিক হয়ে যেতে পারে। তবে, চিনাবাদাম, ট্রি নাটস, মাছ এবং শেলফিশের প্রতি অ্যালার্জি প্রায়শই সারাজীবন স্থায়ী হয় (২০% এরও কম ক্ষেত্রে শিশুরা এগুলো কাটিয়ে ওঠে)।

  • হাঁপানি (Asthma): হাঁপানি এবং খাদ্য অ্যালার্জি প্রায়শই একসাথে দেখা যায়। যদি একজন ব্যক্তির একই সাথে খাদ্য অ্যালার্জি এবং হাঁপানি থাকে, তবে তাদের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে অ্যানাফাইল্যাক্সিস, আরও গুরুতর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অ্যানাফাইল্যাক্সিসের ঝুঁকির কারণ 

কিছু ফ্যাক্টর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া গুরুতর, অর্থাৎ অ্যানাফাইল্যাক্সিসের রূপ নিতে পারে:

  • হাঁপানির ইতিহাস: পূর্বে হাঁপানির লক্ষণ থাকলে অ্যানাফাইল্যাক্সিসের ঝুঁকি বাড়ে।

  • কিশোর বা তরুণ বয়স: কম বয়সীরা এপিনেফ্রিনের ব্যবহার দেরিতে শুরু করতে পারে, যা ঝুঁকি বাড়ায়।

  • এপিনেফ্রিনের ব্যবহারে বিলম্ব: অ্যানাফাইল্যাক্সিসের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা মাত্র এপিনেফ্রিন ব্যবহার না করলে এটি জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে।

  • ত্বকের লক্ষণবিহীন প্রতিক্রিয়া: কিছু ক্ষেত্রে, ত্বকে কোনো স্পষ্ট আমবাত বা ফুসকুড়ি ছাড়াই গুরুতর অভ্যন্তরীণ (যেমন শ্বাসকষ্ট বা রক্তচাপ পতন) প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে, যা বিপদজনক কারণ রোগীরা গুরুত্ব নাও দিতে পারে।

খাদ্য অ্যালার্জি নির্ণয়

খাদ্য অ্যালার্জির সঠিক নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রোগীর জীবন রক্ষা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সাহায্য করে। একজন অ্যালার্জিস্ট (Allergist) বা অভিজ্ঞ স্বাস্থ্য পেশাদার আপনার মেডিকেল ইতিহাস পর্যালোচনা করে এবং নির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক নির্ণয়ে পৌঁছান।

ক. পুঙ্খানুপুঙ্খ চিকিৎসা ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা:

অ্যালার্জিস্ট নির্ণয়ের প্রথম ধাপে রোগীর বিস্তারিত চিকিৎসা ইতিহাস এবং পারিবারিক ইতিহাস সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে:

  • কোন খাবারগুলি খাওয়ার পর লক্ষণ দেখা দেয় এবং কি পরিমাণ খাবার খেয়েছেন?

  • লক্ষণ দেখা দিতে কত সময় লাগে?

  • কী কী লক্ষণ দেখা দেয় এবং কতক্ষণ স্থায়ী হয়?

  • পূর্বে কোনো চিকিৎসার চেষ্টা করেছেন কিনা এবং তাতে কতটা কাজ হয়েছে?

  • লক্ষণগুলো সবসময় একই খাবার থেকে দেখা যায় কিনা?

  • আপনার বা আপনার পরিবারের হাঁপানি, একজিমা, বা অন্য কোনো অ্যালার্জি আছে কিনা?
    এই তথ্যগুলো অ্যালার্জিস্টকে সম্ভাব্য অ্যালার্জেনগুলি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।

খ. স্কিন-প্রিক টেস্ট (Skin-Prick Test):

এটি খাদ্য অ্যালার্জি নির্ণয়ের জন্য একটি দ্রুত ও কার্যকর পদ্ধতি।

  • কার্যপদ্ধতি: ত্বকের উপরে (সাধারণত বাহুর ভেতরের দিকে বা পিঠে) সম্ভাব্য অ্যালার্জেনগুলির সামান্য তরল দ্রবণ ফেলা হয় এবং একটি ছোট জীবাণুমুক্ত প্রোব (প্রিক ল্যান্সেট) ব্যবহার করে ত্বকের উপরের স্তরে হালকা খোঁচা দেওয়া হয়, যাতে দ্রবণটি ত্বকের নিচে প্রবেশ করতে পারে।

  • ফলাফল: সাধারণত ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যায়। যদি কোনো নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের কারণে ত্বকে লালচে, চুলকানিযুক্ত ফোলাভাব (একটি মশার কামড়ের মতো) দেখা দেয়, তাহলে পরীক্ষাটি ইতিবাচক ধরা হয়। কোনো অ্যালার্জেন-মুক্ত তরল (কন্ট্রোল) দিয়েও একই পরীক্ষা করা হয়, যা তুলনার জন্য একটি ভিত্তি প্রদান করে।

  • গুরুত্ব: ইতিবাচক ফল মানেই অ্যালার্জি আছে তা নিশ্চিত নয়, তবে এটি সংবেদনশীলতা নির্দেশ করে। নেতিবাচক ফল অ্যালার্জির সম্ভাবনা বাতিল করতে খুবই সহায়ক।

গ. ব্লাড টেস্ট (IgE অ্যান্টিবডি পরিমাপ)

  • কার্যপদ্ধতি: এই পরীক্ষায় রক্তে নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি IgE অ্যান্টিবডির পরিমাণ পরিমাপ করা হয়।

  • ফলাফল: ফলাফল পেতে সাধারণত এক সপ্তাহ সময় লাগে এবং এটি সংখ্যাসূচক মান হিসাবে রিপোর্ট করা হয়। রক্ত পরীক্ষার নির্ভুলতা স্কিন টেস্টের চেয়ে কিছুটা কম।

  • গুরুত্ব: উচ্চ IgE মাত্রা অ্যালার্জির ঝুঁকি বাড়ায়, কিন্তু এর উচ্চতা মানেই নিশ্চিত অ্যালার্জি নয়।

ঘ. ওরাল ফুড চ্যালেঞ্জ (Oral Food Challenge – OFC):

  • সবচেয়ে সঠিক পদ্ধতি: এটি খাদ্য অ্যালার্জি নির্ণয়ের সবচেয়ে সুনির্দিষ্ট উপায় হিসাবে বিবেচিত হয়।

  • কার্যপদ্ধতি: কঠোর চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রোগীকে অল্প পরিমাণে সম্ভাব্য অ্যালার্জেনিক খাবার নির্দিষ্ট বিরতিতে বাড়ানো মাত্রায় সেবন করানো হয়। এরপর কয়েক ঘণ্টা রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কিনা।

  • ব্যবহার: যখন রোগীর ইতিহাস অস্পষ্ট থাকে বা স্কিন ও ব্লাড টেস্টের ফলাফল অ entscheidungen হয় তখন OFC ব্যবহার করা হয়। অ্যালার্জি কমে গেছে কিনা তা নির্ধারণ করতেও এটি ব্যবহৃত হয়।

  • নিরাপত্তা: অ্যানাফাইল্যাক্সিসের ঝুঁকির কারণে, OFC শুধুমাত্র অ্যালার্জিতে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা এবং জরুরি ঔষধপত্র ও সরঞ্জাম সহ একটি সজ্জিত ক্লিনিক বা হাসপাতালে সম্পন্ন করা উচিত।

ঙ. এলিমিনেশন ডায়েট (Elimination Diet):

কিছু ক্ষেত্রে, চিকিৎসক কয়েক সপ্তাহের জন্য নির্দিষ্ট খাবারগুলিকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে পরামর্শ দেন। এরপর ধীরে ধীরে একটি করে খাবার পুনরায় চালু করা হয় এবং প্রতিক্রিয়াগুলি সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এটি সম্ভাব্য অ্যালার্জেন সনাক্তকরণে সহায়ক হতে পারে।

খাদ্য অ্যালার্জির চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা

বর্তমানে, বেশিরভাগ খাদ্য অ্যালার্জির জন্য কোনো চূড়ান্ত নিরাময় নেই, তবে প্রতিক্রিয়া এড়াতে এবং গুরুতর হলে দ্রুত চিকিৎসা দিতে অনেক কার্যকরী কৌশল রয়েছে।

ক. প্রধানত: খাদ্য পরিহার 

  • সচেতন খাদ্য নির্বাচন: যে খাবারগুলো অ্যালার্জির কারণ হয়, সেগুলোকে আপনার খাদ্যতালিকা থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

  • খাদ্য লেবেল পরীক্ষা:

    • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে FALCPA (Food Allergy Labeling and Consumer Protection Act of 2004) অনুযায়ী, সমস্ত প্যাকেজড খাবারে প্রধান আটটি খাদ্য অ্যালার্জেন (দুধ, ডিম, চিনাবাদাম, ট্রি নাটস, মাছ, শেলফিশ, গম, সয়াবিন) স্পষ্ট ও সহজ ভাষায় উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।

    • FASTER Act of 2021: এই আইনের মাধ্যমে তিলকে নবম প্রধান অ্যালার্জেন হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, এবং ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে খাদ্য উৎপাদকদের জন্য এর উল্লেখ বাধ্যতামূলক হয়েছে।

    • সতর্কতামূলক লেবেল: “May contain,” “might contain,” “made on shared equipment,” বা “made in a shared facility” এর মতো বাক্যগুলির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকুন। এই বাক্যগুলি কোনো বাধ্যতামূলক মান অনুযায়ী না হলেও, অ্যালার্জেন দ্বারা দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

  • খাদ্যতালিকাবিদ/পুষ্টিবিদদের পরামর্শ: খাদ্য তালিকা থেকে নির্দিষ্ট খাবার বাদ দিলে যাতে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব না হয়, সে বিষয়ে একজন অভিজ্ঞ খাদ্যতালিকাবিদ (Dietitian) বা পুষ্টিবিদ (Nutritionist) আপনাকে সহায়তা করতে পারেন। তারা বিকল্প খাবারের পরামর্শ দিতে পারেন।

  • রেস্তোরাঁ ও সামাজিক পরিবেশে সতর্কতা:

    • শেফ কার্ড (Chef Card) ব্যবহার: এমন কার্ড ব্যবহার করুন যাতে আপনার অ্যালার্জি এবং কী কী খাবার আপনি এড়িয়ে চলেন তা স্পষ্টভাবে লেখা থাকে।

    • ওয়েটার বা শেফের সাথে সরাসরি কথা বলুন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনার খাবার প্রস্তুত করার সময় যেন ক্রস-কন্টামিনেশন না হয় (অর্থাৎ, একই সরঞ্জাম বা পৃষ্ঠ ব্যবহার করে অ্যালার্জেনিক খাবার প্রস্তুত করা না হয়)।

    • যখন সন্দেহ হয়, খাবার এড়িয়ে চলুন।

  • বাড়ির বাইরে খাবারের পরিকল্পনা: ভ্রমণ বা ইভেন্টের জন্য বের হওয়ার আগে নিরাপদ খাবারের পরিকল্পনা করুন। যদি কোনো পার্টিতে কেক বা মিষ্টি আপনার জন্য নিরাপদ না হয়, তবে বিকল্প কিছু নিয়ে যান যাতে বাদ পড়ার অনুভূতি না থাকে।

খ. জরুরী চিকিৎসা: এপিনেফ্রিন 

অ্যানাফাইল্যাক্সিস হলো খাদ্য অ্যালার্জির সবচেয়ে মারাত্মক পরিণতি এবং এটি একটি জীবন-হুমকির সম্মুখীনকারী প্রতিক্রিয়া, যার জন্য অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন।

  • প্রথম-লাইন চিকিৎসা (First-line treatment): এপিনেফ্রিন (অ্যাডadrenaline) হলো অ্যানাফাইল্যাক্সিসের একমাত্র কার্যকর ঔষধ। এটি দ্রুত রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে রক্তচাপ বাড়ায়, শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করে এবং অন্যান্য গুরুতর লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করে।

  • এপিনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টর (EpiPen, Adrenaclick, Auvi-Q): একবার খাদ্য অ্যালার্জি ধরা পড়লে, আপনার অ্যালার্জিস্ট একটি এপিনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টর (autoinjector) ব্যবহার করতে শেখাবেন এবং এটি সঙ্গে রাখতে পরামর্শ দেবেন।

  • দুই ডোজের প্রয়োজনীয়তা: সর্বদা দুটি ডোজ অটো-ইনজেক্টর হাতের কাছে রাখুন, কারণ প্রায় ২০% ক্ষেত্রে প্রথম ডোজের পর গুরুতর প্রতিক্রিয়া পুনরায় দেখা যেতে পারে। কোন ব্যক্তির দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োজন হবে তা আগে থেকে বলা যায় না, তাই সকলের জন্য এটি প্রযোজ্য।

  • প্রয়োগের সময় ও পদ্ধতি: শ্বাসকষ্ট, ক্রমাগত কাশি, দুর্বল পালস, আমবাত, গলা সঙ্কুচিত হওয়া, শ্বাস নিতে বা গিলতে অসুবিধা, অথবা ত্বক ও হজমতন্ত্রের একাধিক লক্ষণ একসাথে দেখা দিলে দেরি না করে এপিনেফ্রিন ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে দ্বিতীয় ডোজ দিতে প্রস্তুত থাকুন।

  • হাসপাতালে ভর্তি: এপিনেফ্রিন ব্যবহারের পর অবিলম্বে জরুরি পরিষেবাতে (৯১১/স্থানীয় জরুরি নম্বর) ফোন করুন এবং অ্যাম্বুলেন্স আসার পর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলুন। হাসপাতালে পর্যবেক্ষণের জন্য যেতে হবে।

  • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: এপিনেফ্রিনের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ, অস্থিরতা, মাথা ঘোরা এবং কাঁপুনি। গুরুতর কার্ডিয়াক সমস্যা বা ডায়াবেটিসের মতো পূর্ব-বিদ্যমান কিছু সমস্যা থাকলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কিছুটা বেশি হতে পারে। তবে, খাদ্য অ্যালার্জির মারাত্মক ঝুঁকির তুলনায় এর সুবিধা অনেক বেশি এবং এটি অ্যানাফাইল্যাক্সিসের জন্য খুবই নিরাপদ ও কার্যকর।

  • অ্যান্টিহিস্টামিনের সাথে পার্থক্য: অন্যান্য ঔষধ, যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন, খাদ্য অ্যালার্জির হালকা লক্ষণগুলির উপশমে সাহায্য করতে পারে, তবে অ্যানাফাইল্যাক্সিসের কোনো ঔষধ এপিনেফ্রিনের বিকল্প নয়

গ. উন্নত/নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি 

  • ওমালিজুম্যাব (Omalizumab – Xolair): এটি একটি প্রেসক্রিপশন ইনজেকশন যা IgE-কে টার্গেট করে শরীরের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে। ১ বছর বা তার বেশি বয়সের ব্যক্তিদের খাদ্য অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে এটি ব্যবহৃত হয়। এটি অ্যালার্জির জরুরি চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত নয়, কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে খাদ্য অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলে প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি ও তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। যারা ওমালিজুম্যাব ব্যবহার করেন তাদেরও অ্যালার্জিক খাদ্য এড়িয়ে চলতে হবে।

  • ওরাল ইমিউনোথেরাপি (Oral Immunotherapy – OIT): এটি একটি নির্দিষ্ট থেরাপি যা রোগীর নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনিক খাবারের প্রতি সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে, চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে, রোগীকে ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান মাত্রায় অ্যালার্জেনিক খাবার (যেমন চিনাবাদাম) খাওয়ানো হয়। Palforzia® নামক একটি ঔষধ চিনাবাদাম অ্যালার্জির জন্য ৪ থেকে ১৭ বছর বয়সের শিশুদের মধ্যে ওআইটি (OIT) হিসাবে অনুমোদিত হয়েছে। লক্ষ্য হলো এমন একটি অবস্থায় পৌঁছানো যেখানে ব্যক্তি দুর্ঘটনাক্রমে ছোট মাত্রার অ্যালার্জেনিক খাবার গ্রহণ করলেও তার গুরুতর প্রতিক্রিয়া না হয় (जिसे “বাইটস-প্রুফ” कहा जाता है)।

  • সাবলিঙ্গুয়াল ইমিউনোথেরাপি (Sublingual Immunotherapy – SLIT): OIT এর মতোই এটিও শরীরের সহনশীলতা বাড়াতে কাজ করে। তবে, এক্ষেত্রে অ্যালার্জেনিক নির্যাস তরল বা ট্যাবলেট আকারে জিহ্বার নিচে রাখা হয় এবং দ্রবীভূত হতে দেওয়া হয়। এটিও চিকিৎসকের কঠোর তত্ত্বাবধানে করতে হয়।

ঘ. শিশুদের খাদ্য অ্যালার্জি: বিশেষ বিবেচ্য বিষয়সমূহ:

  • শিশুদের ক্ষেত্রে দুধ, ডিম, গম এবং সয়াবিনের অ্যালার্জি প্রায়শই বড় হওয়ার সাথে সাথে সেরে যায়। কিন্তু চিনাবাদাম, ট্রি নাটস, মাছ এবং শেলফিশ অ্যালার্জি সারাজীবন থাকতে পারে।

  • জরুরি কর্ম পরিকল্পনা (Emergency Action Plan): শিশু যেখানে সময় কাটায় (স্কুল, ডে-কেয়ার) সেখানে একটি লিখিত জরুরি কর্ম পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক, যা অ্যালার্জির লক্ষণ চেনা এবং কিভাবে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দমন করা যায় তা নির্দেশ করবে।

  • এপিনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টরের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ: শিক্ষক, পরিবার এবং শিশু যত্ন প্রদানকারীদের এপিনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টর ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ থাকা উচিত।

  • আইনের ভূমিকা: School Access to Emergency Epinephrine Act (PL 113-48) রাজ্যগুলিকে স্কুলগুলিতে এপিনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টর রাখার জন্য উৎসাহিত করে।

  • মেডিকেল এলার্ট ব্রেসলেট: অ্যালার্জিতে আক্রান্ত শিশুদের অবশ্যই মেডিকেল অ্যালার্ট ব্রেসলেট বা নেকলেস পরিয়ে রাখুন, যেখানে তাদের অ্যালার্জির তথ্য ও জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ থাকবে।

  • বাদাম অ্যালার্জি প্রতিরোধে নতুন গাইডলাইন: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (NIAID) কর্তৃক প্রকাশিত (২০১৭ সালে) নির্দেশিকা অনুযায়ী, উচ্চ-ঝুঁকির শিশুদের (যেমন যাদের একজিমা বা ডিম অ্যালার্জি আছে) ৪-৬ মাস বয়স থেকে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে নিয়মিতভাবে অল্প পরিমাণে চিনাবাদামযুক্ত খাবার প্রবর্তন করা বাদাম অ্যালার্জির ঝুঁকি প্রায় ৮০% কমাতে পারে।

খাদ্য অ্যালার্জি প্রতিরোধ

খাদ্য অ্যালার্জি সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করার কোনো সুনির্দিষ্ট উপায় না থাকলেও, কিছু কৌশল গ্রহণ করে অ্যালার্জির বিকাশ রোধ করা যেতে পারে এবং দুর্ঘটনাক্রমে অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি কমানো যায়।

ক. প্রারম্ভিক সংস্পর্শ এবং ঝুঁকি হ্রাস:

  • বাদাম পণ্যের প্রাথমিক প্রবর্তন: গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের (যেমন যাদের একজিমা বা ডিমের অ্যালার্জি আছে) চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ৪ থেকে ৬ মাস বয়স থেকে নিয়মিত বাদামযুক্ত পণ্য (যেমন পাতলা চিনাবাদাম মাখন) অল্প পরিমাণে প্রবর্তন করলে বাদাম অ্যালার্জির ঝুঁকি প্রায় ৮০% কমে যায় (NIAID গাইডলাইন)। তবে, এটি কেবল একজন বিশেষজ্ঞের নির্দেশিকায় করা উচিত এবং গোটা চিনাবাদাম শিশুদের জন্য দমবন্ধ হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করে, তাই এটি পরিহার করা আবশ্যক।

  • ব্রেস্টফিডিং (স্তন্যদান): মা যদি নিজে অ্যালার্জিক না হন, তাহলে স্তন্যদানকারী মায়েদের খাদ্যে সাধারণ অ্যালার্জেন (যেমন চিনাবাদাম) অন্তর্ভুক্ত রাখা শিশুর অ্যালার্জি বিকাশের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

  • সঠিক সময়ে নতুন খাবার প্রবর্তন: শিশুর বয়স অনুযায়ী কোন খাবার কখন দিতে হবে, তা নিয়ে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।

খ. দুর্ঘটনাক্রমে সংস্পর্শ প্রতিরোধে দৈনন্দিন কৌশল:

একবার খাদ্য অ্যালার্জি তৈরি হলে, লক্ষণ দেখা দেয় এমন খাবার পরিহার করাই সবচেয়ে ভালো উপায়।

  • খাদ্য ও পানীয় সম্পর্কে সচেতন থাকুন: সর্বদা খাবারের লেবেলগুলো সতর্কতার সাথে পড়ুন। মনে রাখবেন যে কিছু উপাদান বিভিন্ন নামে তালিকাভুক্ত হতে পারে।

  • মেডিকেল এলার্ট ব্রেসলেট/নেকলেস: যদি আপনার বা আপনার সন্তানের গুরুতর অ্যালার্জির ইতিহাস থাকে, তবে একটি মেডিকেল এলার্ট ব্রেসলেট বা নেকলেস পরুন যা অন্যদের আপনার অ্যালার্জির বিষয়ে সতর্ক করবে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সাহায্য চাইতে সক্ষম করবে।

  • জরুরী এপিনেফ্রিন: অ্যালার্জির তীব্র প্রতিক্রিয়া (অ্যানাফাইল্যাক্সিস) হওয়ার ঝুঁকি থাকলে সবসময় একটি এপিনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টর (EpiPen, Adrenaclick) সঙ্গে রাখুন এবং কিভাবে এটি ব্যবহার করতে হয়, তা জেনে রাখুন।

  • রেস্তোরাঁ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সতর্কতা: রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়ার সময় সর্বদা আপনার ওয়েটারকে আপনার অ্যালার্জির বিষয়ে স্পষ্ট করে জানান। সম্ভব হলে শেফের সাথে সরাসরি কথা বলুন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনার খাবার যেন অ্যালার্জেন মুক্ত এবং ক্রস-কন্টামিনেশন-মুক্ত পরিবেশে তৈরি হয়। শেফ কার্ড এক্ষেত্রে খুব কার্যকর।

  • স্ন্যাক ও খাবার পরিকল্পনা: বাড়ির বাইরে ভ্রমণের সময় বা সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে আগে থেকেই নিরাপদ খাবার এবং স্ন্যাকস প্যাক করে রাখুন। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ এড়ানো সহজ হবে।

  • শিশুদের জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা: আপনার সন্তানের তত্ত্বাবধায়ক (স্কুলের শিক্ষক, ডে-কেয়ার কর্মী, বন্ধুদের বাবা-মা) সকলকে তার খাদ্য অ্যালার্জি এবং এর সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে অবগত রাখুন। তাদেরকে জরুরি কর্ম পরিকল্পনা সম্পর্কেও সচেতন করুন। শিশুকে ছোট থেকেই নিরাপদ খাদ্য এবং সন্দেহজনক খাবার এড়িয়ে চলতে শেখান।

কখন একজন ডাক্তার দেখাবেন?

  • সাধারণ অ্যালার্জির লক্ষণে: যদি কোনো নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার পর আপনার বা আপনার সন্তানের নিয়মিতভাবে (যেমন ত্বক বা হজমতন্ত্রের হালকা লক্ষণ) অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে একজন অ্যালার্জিস্ট বা প্রাথমিক পরিচর্যা চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। রোগ নির্ণয় দ্রুত এবং নির্ভুল হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

  • জরুরি অবস্থা (অ্যানাফাইল্যাক্সিস): অ্যানাফাইল্যাক্সিসের যেকোনো লক্ষণ (যেমন: শ্বাসকষ্ট, বুকে টাইট লাগা, গলা বা মুখ ফুলে যাওয়া, জ্ঞান হারানোর মতো অনুভূতি, রক্তচাপের তীব্র পতন) দেখা দিলে তা জীবন-হুমকির সম্মুখীনকারী হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ০১১ ডায়াল করুন (বা আপনার এলাকার জরুরি পরিষেবা নম্বরে) এবং যত দ্রুত সম্ভব এপিনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টর ব্যবহার করে জরুরি চিকিৎসা কেন্দ্রে (Emergency Room) যান। জরুরি চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মীদের অবহিত করুন যে এপিনেফ্রিন দেওয়া হয়েছে এবং আরও ডোজ লাগতে পারে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

১. খাদ্য অ্যালার্জি কতটুকু সাধারণ?
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ৬% থেকে ১১% প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রায় ৮% শিশু খাদ্য অ্যালার্জিতে আক্রান্ত। এটি শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

২. প্রাপ্তবয়স্কদের কি নতুন করে খাদ্য অ্যালার্জি হতে পারে?
যদিও বেশিরভাগ খাদ্য অ্যালার্জি শৈশবে বিকশিত হয়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদেরও বিরল ক্ষেত্রে নতুন করে অ্যালার্জি হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণত শেলফিশ, ট্রি নাটস, চিনাবাদাম এবং মাছের প্রতি নতুন করে অ্যালার্জি দেখা যায়। বমি বা ডায়রিয়ার মতো লক্ষণগুলিকে প্রায়শই ফ্লু বা ফুড পয়জনিং (food poisoning) হিসাবে ভুল করা হয়, যা সঠিক নির্ণয়ে বিলম্ব ঘটায়। এছাড়াও, পোলেন-খাদ্য অ্যালার্জি সিন্ড্রোম (oral allergy syndrome) প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা দিতে পারে, যা পরাগরেণুর প্রতি অ্যালার্জির কারণে কাঁচা ফল বা সবজিতে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। 

৩. খাদ্য অ্যালার্জি কি পুরোপুরি সেরে যায়?
হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে সেরে যায়। শিশুরা সাধারণত দুধ, ডিম, গম এবং সয়াবিন অ্যালার্জি থেকে মুক্ত হয় (বয়স বাড়ার সাথে সাথে)। তবে, চিনাবাদাম, ট্রি নাটস, মাছ এবং শেলফিশের প্রতি অ্যালার্জি সাধারণত সারাজীবন থাকে। প্রায় ২৫% শিশু বাদাম অ্যালার্জি কাটিয়ে উঠতে পারে এবং অল্প সংখ্যক শিশু ট্রি নাট অ্যালার্জিও কাটিয়ে উঠতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে খাদ্য অ্যালার্জি কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম, যদিও এই বিষয়ে বেশি গবেষণা হয়নি। 

৪. খাবার স্পর্শ করলে কি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে?
খাবার স্পর্শ করলে সাধারণত গুরুতর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া (অ্যানাফাইল্যাক্সিস) হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ত্বকের সরাসরি সংস্পর্শে কেবল একটি স্থানীয় ফুসকুড়ি বা চুলকানি হতে পারে, যা সাধারণত সাবান ও পানি দিয়ে ধুলে সেরে যায় এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। মুখে খাবার প্রবেশ না করা পর্যন্ত গুরুতর প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। 

৫. বায়ুবাহিত অ্যালার্জেনের (Airborne allergens) কারণে গুরুতর প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
বায়ুবাহিত খাদ্য অ্যালার্জেন থেকে গুরুতর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বিরল, প্রায় নেই বললেই চলে। এমন কোনো সুনির্দিষ্ট গবেষণা নেই যা conclusively প্রমাণ করে যে বায়ুবাহিত অ্যালার্জেন গুরুতর উপসর্গ সৃষ্টি করে। কিছু বিরল ক্ষেত্রে রান্না করা মাছ থেকে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তবে তা ব্যতিক্রম। চিনাবাদামের ধুলাবালি থেকে উদ্বেগ থাকলেও, বেশিরভাগ প্রতিক্রিয়া ত্বকের সংস্পর্শ বা মুখ দিয়ে গ্রহণের কারণে হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং হাতে লাগা অ্যালার্জেন সরিয়ে ফেললে ঝুঁকি অনেক কমে যায়। 

৬. খাদ্য অ্যালার্জির পরীক্ষার খরচ কেমন?
খাদ্য অ্যালার্জি পরীক্ষার খরচ বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে, এবং স্বাস্থ্য বীমা (health insurance) অনুযায়ী এর তারতম্য হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিনা কারণে ব্যাপক প্যানেল টেস্ট (broad panel testing) করানো উচিত নয়, কারণ একটি ইতিবাচক ফল সবসময় অ্যালার্জি নির্দেশ করে না। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট খাবার থেকে লক্ষণ দেখা গেলে এবং চিকিৎসা ইতিহাস যাচাই করার পরেই অ্যালার্জি পরীক্ষা করানো উচিত। একজন বিশেষজ্ঞ অ্যালার্জিস্টই সঠিক পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন। 

৭. গ্লুটেন কি একটি খাদ্য অ্যালার্জি?
না। “গ্লুটেন অ্যালার্জি” শব্দটি একটি ভুল ধারণা এবং এটি সাধারণত হুইট অ্যালার্জি (wheat allergy) অথবা সিলিয়াক রোগের (celiac disease) সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়। গ্লুটেন (Gluten) হল গম, যব এবং রাইয়ে (wheat, barley, and rye) পাওয়া একটি প্রোটিন। সিলিয়াক রোগ হল একটি হজমতন্ত্রের অবস্থা যেখানে গ্লুটেন খেলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছোট অন্ত্রে ক্ষতি করে, কিন্তু এটি অ্যানাফাইল্যাক্সিস সৃষ্টি করে না এবং এটি একটি সাধারণ খাদ্য অ্যালার্জির থেকে আলাদা। অন্যদিকে, হুইট অ্যালার্জি একটি IgE-মধ্যস্থ অ্যালার্জি, যা গমের প্রতি IgE প্রতিক্রিয়া দেখায়। গ্লুটেন অসহিষ্ণুতা (Gluten intolerance) নামক একটি নন-অ্যালার্জিক অবস্থাও আছে, যেখানে গ্লুটেন খেলে অস্বস্তি হয় কিন্তু এটি সিলিয়াক রোগ বা অ্যালার্জি কোনোটাই নয়। সিলিয়াক রোগের নির্ণয় একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট (gastroenterologist) করেন। 

Shopping Cart
Scroll to Top