হস্তমৈথুন (Masturbation) এমন একটি স্বাভাবিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত যৌন আচরণ, যেখানে একজন মানুষ নিজের শরীরের যৌন অংশে হাত বা অন্য কোনো উপায়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে যৌন তৃপ্তি লাভ করে। এটি পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মধ্যেই দেখা যায় এবং বৈজ্ঞানিকভাবে এটি স্বাস্থ্যকর যৌনতার একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়—বিশেষ করে তখন, যখন এটি অতিরিক্ত নয় এবং কোনো ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করে না।
Table of Contents
Toggleবিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ও যৌন গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষ কিশোর বয়সে প্রথম হস্তমৈথুন করে এবং বয়সভেদে তা কম-বেশি চলতে থাকে। এটি একদিক দিয়ে শরীরের স্বাভাবিক যৌন প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ, যার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজেকে বুঝতে শেখে এবং যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কেও সচেতন হতে পারে।
হস্তমৈথুন কী?
হস্তমৈথুন হলো এমন একটি যৌন আচরণ, যা একজন ব্যক্তি একা নিজের শরীরের যৌনাঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টির মাধ্যমে যৌন আনন্দ বা তৃপ্তি লাভের জন্য করে থাকে। এটি একটি ব্যক্তিগত অভ্যাস, যা সাধারণত যৌবনে শুরু হয় এবং অনেক সময় পর্যন্ত চলতে থাকে।
➤ হস্তমৈথুনের সংজ্ঞা (Definition of Masturbation)
বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা:
হস্তমৈথুন (Masturbation) হলো স্বেচ্ছায় নিজের যৌনাঙ্গে হাত বা অন্য কোনো উপায়ে শারীরিক উদ্দীপনা তৈরি করে যৌন উত্তেজনা লাভ এবং অনেক সময় বীর্যস্খলন বা যৌন তৃপ্তির মাধ্যমে শেষ করা।
এটি কোনো যৌনসঙ্গীর অংশগ্রহণ ছাড়াই একা সম্পন্ন করা হয় এবং এটি একেবারেই স্বাভাবিক এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত একটি যৌন আচরণ।
➤ হস্তমৈথুনের ধরণ (Types: পুরুষ ও মহিলা)
হস্তমৈথুনের ধরণ পুরুষ ও মহিলার ক্ষেত্রে কিছুটা আলাদা হয়ে থাকে।
🔹 পুরুষদের ক্ষেত্রে:
- সাধারণত হাত ব্যবহার করে লিঙ্গে ঘর্ষণ বা চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বীর্যস্খলন ঘটানো হয়।
- অনেকে নির্দিষ্ট ভঙ্গি বা কল্পনার (Fantasy) সাহায্য নিয়ে এটি করে থাকেন।
🔹 মহিলাদের ক্ষেত্রে:
- ক্লিটোরিস, যোনিমুখ বা স্তনের স্পর্শ ও ঘর্ষণের মাধ্যমে যৌন উত্তেজনা তৈরি করা হয়।
- অনেকেই যৌন উত্তেজনা অর্জনের জন্য কল্পনা, সঙ্গীত, বা ভিডিওর সহায়তা নেন।
📌 উদাহরণ:
একজন কিশোর যখন নিজের শরীর সম্পর্কে কৌতূহলী হয়, তখন সে নিজের যৌনাঙ্গে হাত দিয়ে অনুভব করতে পারে কেমন লাগে। ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারে এতে একধরনের আরাম বা উত্তেজনা তৈরি হয়—এটাই হলো হস্তমৈথুনের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা।
➤ হস্তমৈথুনের উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়া (Why and How People Masturbate)
উদ্দেশ্য:
মানুষ সাধারণত হস্তমৈথুন করে নিচের কারণে—
- যৌন উত্তেজনা কমানো
- মানসিক চাপ বা টেনশন থেকে মুক্তি
- একাকিত্ব বা যৌন সঙ্গী না থাকলে
- নিজের যৌনতা বোঝা বা আবিষ্কার করা
প্রক্রিয়া:
- পুরুষ: লিঙ্গে হাত দিয়ে ঘর্ষণ করে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলে বীর্যস্খলন ঘটানো হয়
- মহিলা: ক্লিটোরিসে স্পর্শ করে অথবা যোনির বাইরের অংশে চাপ প্রয়োগ করে যৌন উত্তেজনা তৈরি করা হয়
📌 টিপস:
নিজের পরিচ্ছন্নতা ও হাইজিন বজায় রেখে হস্তমৈথুন করাই নিরাপদ। অতিরিক্ত বা জোর প্রয়োগ শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
➤ যৌন স্বাস্থ্যে এর ভূমিকা (Physiological Role in Sexual Health)
হস্তমৈথুন যৌন স্বাস্থ্য রক্ষায় কিছু ইতিবাচক ভূমিকা রাখে:
✔️ যৌন টেনশন কমায়
✔️ ঘুম ভালো হয়
✔️ শরীর থেকে হ্যাপি হরমোন (Dopamine, Endorphin) নিঃসরণ হয়
✔️ পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে
✔️ মহিলাদের ক্ষেত্রে যোনির রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে
📌 উদাহরণ:
অনেক চিকিৎসক পুরুষ রোগীদের যৌন স্ট্রেস কমানোর জন্য মাঝে মাঝে হস্তমৈথুন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, বিশেষ করে যদি তিনি অতিরিক্ত যৌন চাপ অনুভব করেন বা সহবাসের সুযোগ না থাকে।
✦ হস্তমৈথুনের উপকারিতা (Medical and Psychological Benefits)
বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত হয়েছে, পরিমিত এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হস্তমৈথুন করলে তা শরীর ও মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিচে এর প্রধান কিছু উপকারিতা ব্যাখ্যা করা হলো।
➤ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানো
হস্তমৈথুনের সময় শরীর থেকে কিছু হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সহায়ক।
➤ এন্ডোরফিন (Endorphins) নিঃসরণ ও মস্তিষ্কে প্রভাব
এন্ডোরফিন (Endorphin) হলো একধরনের নিউরোকেমিক্যাল, যাকে “হ্যাপি হরমোন” বলা হয়। হস্তমৈথুনের সময় শরীরে এন্ডোরফিন ও ডোপামিন (Dopamine) নিঃসৃত হয়, যা—
- মন ভালো করতে সাহায্য করে
- দুশ্চিন্তা কমায়
- মানসিক প্রশান্তি আনে
- উদ্বেগ বা হতাশা হ্রাস করে
📌 উদাহরণ:
কোনো ব্যক্তি যদি স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তায় থাকেন, তখন হস্তমৈথুনের মাধ্যমে তার মস্তিষ্কে প্রশান্তির অনুভূতি তৈরি হয়, যেটি প্রাকৃতিকভাবে তাকে স্বস্তি দেয়।
➤ ঘুমের মান উন্নয়ন
হস্তমৈথুনের পর শরীর শিথিল হয় এবং মস্তিষ্কে সেরোটোনিন (Serotonin) নামক হরমোনের নিঃসরণ হয়, যা ঘুমের মান উন্নত করে।
- ঘুমাতে সাহায্য করে
- ঘুম গভীর হয়
- রাতের ঘুমের ব্যাঘাত কমে যায়
📌 বিশেষ করে যারা ইনসমনিয়া (ঘুম না হওয়া রোগ) বা মানসিক চাপজনিত ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হতে পারে।
➤ যৌন অঙ্গের স্বাস্থ্য রক্ষা
হস্তমৈথুন যৌন অঙ্গের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
➤ প্রোস্টেট ক্যান্সার রিস্ক কমানো (পুরুষদের ক্ষেত্রে)
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত হস্তমৈথুন পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থিতে জমে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এতে—
- প্রোস্টেটের ইনফ্লেমেশন কমে
- প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়
- ইউরিনারি ফাংশন উন্নত হয়
➤ যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ শেখা
নিয়মিত হস্তমৈথুনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের যৌন উত্তেজনার মাত্রা ও সময় নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে।
- সহবাসের সময় দ্রুত বীর্যপাত (Premature Ejaculation) রোধে সহায়তা করে
- যৌন সহবাসের সময় বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়
- নিজের শরীরের যৌন প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে
📌 উদাহরণ:
যেসব পুরুষ অতিস্বল্প সময়ে বীর্যস্খলনের সমস্যায় ভোগেন, তাদের চিকিৎসায় অনেক সময় হস্তমৈথুনের মাধ্যমে নিজেকে প্রশিক্ষিত হতে বলা হয়।
➤ নিরাপদ যৌন বিকল্প হিসেবে হস্তমৈথুন
হস্তমৈথুন একটি নিরাপদ যৌন আচরণ যা যৌন সঙ্গী ছাড়া নিজেই নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করার একটি উপায়। এটি—
- যৌনবাহিত রোগ (Sexually Transmitted Infections – STIs) থেকে সুরক্ষা দেয়
- অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের কোনো ঝুঁকি থাকে না
- যৌনসঙ্গী ছাড়া যৌন চাপ কমানো যায়
📌 উদাহরণ:
যেসব মানুষ অবিবাহিত, একাকী, বা দীর্ঘসময় সঙ্গীর থেকে দূরে থাকেন, তাদের জন্য হস্তমৈথুন একটি নিরাপদ ও প্রাকৃতিক উপায় হতে পারে যৌন চাপ কমানোর।
➤ মাসিকের ব্যথা হ্রাস ও পিরিয়ড রেগুলার করার ভূমিকা (মহিলাদের ক্ষেত্রে)
নারীদের ক্ষেত্রে হস্তমৈথুন পিরিয়ড সংক্রান্ত বেশ কিছু উপকারে আসে:
- হস্তমৈথুনের সময় যোনিতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা মাসিকের সময়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
- জরায়ুর পেশিগুলো শিথিল হয়, ফলে ব্যথা ও ক্র্যাম্প হ্রাস পায়
- নিয়মিত হস্তমৈথুনে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে, যা মাসিক নিয়মিত করতেও সাহায্য করতে পারে
📌 উদাহরণ:
মাসিকের সময় যেসব নারী তলপেটে ব্যথায় কষ্ট পান, অনেক সময় দেখা যায় হস্তমৈথুনের মাধ্যমে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে তারা আরাম অনুভব করেন।
➤ নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি
হস্তমৈথুনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া, পছন্দ-অপছন্দ ও উত্তেজনার স্তর সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারেন। এর ফলে—
- নিজের যৌনতা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস বাড়ে
- ভবিষ্যতে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেকে ও সঙ্গীকে বোঝা সহজ হয়
- যৌনজীবনে স্বাস্থ্যকর যোগাযোগ ও পারস্পরিক সম্মতি তৈরি হয়
📌 উদাহরণ:
একজন নারী হস্তমৈথুনের মাধ্যমে জানতে পারেন তার কোন অংশে স্পর্শ করলে বেশি আরামদায়ক অনুভব হয়, যা ভবিষ্যতের যৌন জীবনে কার্যকর হতে পারে।
✦ হস্তমৈথুনের অপকারিতা (Side Effects or Overuse Risks)
যদিও হস্তমৈথুন একটি প্রাকৃতিক ও নিরাপদ যৌন আচরণ, তবে অতিরিক্ত করলে এর কিছু শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় মানুষ নানা ভুল উপায়ে বা অতিরিক্তভাবে হস্তমৈথুন করে শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
➤ অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে শারীরিক সমস্যা
পরিমিত না হয়ে যদি হস্তমৈথুন অভ্যাসে পরিণত হয় বা দিনের পর দিন অত্যধিক বার ঘটে, তাহলে তা শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
➤ যৌন অঙ্গের অতিরিক্ত উত্তেজনা ও জ্বালাপোড়া
- পুরুষদের ক্ষেত্রে লিঙ্গের চামড়ায় ঘর্ষণের কারণে লালচে হয়ে যাওয়া, ব্যথা বা ফেটে যাওয়া দেখা যেতে পারে
- মহিলাদের ক্ষেত্রে ক্লিটোরিস বা যোনি অঞ্চলে অতিরিক্ত ঘর্ষণের ফলে জ্বালাপোড়া ও অস্বস্তি হতে পারে
- হস্তমৈথুনের সময় যদি ত্বকের জন্য নিরাপদ না এমন কোনো বস্তু বা উপায় ব্যবহার করা হয়, তাহলে সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকে
📌 উদাহরণ:
অনেক পুরুষ হস্তমৈথুনের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করেন, এতে লিঙ্গে ক্ষত বা সংবেদনশীলতা হ্রাস পেতে পারে।
➤ ক্লান্তি, কোমর ব্যথা, চোখে অস্পষ্টতা ইত্যাদি মিথ ও বাস্তবতা
অনেক সমাজে প্রচলিত আছে—
- হস্তমৈথুন করলে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়
- কোমরে ব্যথা হয়
- শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে
- মাথা ঘোরায় বা চেহারা শুকিয়ে যায়
✅ বাস্তবতা:
এগুলি অধিকাংশই ভ্রান্ত ধারণা (Myths)। তবে যদি কেউ দিনে অনেকবার বা প্রতিদিন হস্তমৈথুন করে, তাহলে সাময়িক ক্লান্তি বা মেজাজের পরিবর্তন হতে পারে, কারণ এতে শরীরের শক্তি ক্ষয় হয় এবং হরমোনের সাময়িক ওঠানামা ঘটে।
📌 উদাহরণ:
যদি কেউ দিনে ৪-৫ বার হস্তমৈথুন করেন, তাহলে তার পেশি দুর্বল লাগতে পারে, ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে বা মন-মেজাজ খারাপ থাকতে পারে।
➤ মানসিক ও আবেগজনিত সমস্যা
অতিরিক্ত বা নিয়ন্ত্রণহীন হস্তমৈথুন শরীরের পাশাপাশি মনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যারা ছোটবেলা থেকেই এটি গোপনে করে, বা যাদের ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটিকে পাপ মনে হয়, তাদের মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব ও অপরাধবোধ তৈরি হতে পারে।
➤ গিল্ট/দোষবোধ, আত্মসম্মানহীনতা
- অনেক মানুষ হস্তমৈথুনের পরে মনে করেন তারা খারাপ কিছু করেছেন
- ধর্মীয় মূল্যবোধ বা সামাজিক রীতিনীতির কারণে এটি নিয়ে অপরাধবোধ জন্মায়
- নিয়মিত হস্তমৈথুনের ফলে নিজের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়
- ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান কমে যেতে পারে
📌 উদাহরণ:
একজন কিশোর হস্তমৈথুন করার পর যদি শুনে “এটি হারাম” বা “এর ফলে শরীর নষ্ট হয়ে যায়,” তখন তার মনে দোষবোধ জন্মাতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
➤ হস্তমৈথুনে আসক্তি (Masturbation Addiction)
যখন কেউ এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে—
- দিনে বারবার হস্তমৈথুন করে
- কাজ, পড়াশোনা বা সামাজিক জীবন ব্যাহত হয়
- চাইলেও বন্ধ করতে পারে না
- মস্তিষ্ক শুধু যৌন উত্তেজনা নিয়েই ভাবতে থাকে
তখন এটিকে বলা হয় হস্তমৈথুন আসক্তি (Masturbation Addiction)।
চিকিৎসাগতভাবে এটি একটি আচরণগত আসক্তি (Behavioral Addiction) হিসেবে ধরা হয়, যা মনোচিকিৎসা বা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
📌 উদাহরণ:
একজন যুবক প্রতিদিন ৪-৫ বার হস্তমৈথুন করে, যার ফলে সে কাজে মনোযোগ দিতে পারে না, বন্ধুদের সঙ্গে মেশে না—এটি আসক্তির লক্ষণ।
➤ দাম্পত্য জীবনে নেতিবাচক প্রভাব
হস্তমৈথুন অতিরিক্ত ও অবাধে করলে দাম্পত্য জীবনে কিছু নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যদি এটি নিয়ন্ত্রণহীন হয়, তাহলে সহবাসে মনোযোগ কমে যেতে পারে।
➤ লিঙ্গ আগা মোটা গোরা চিকন হয়ে যায়
- অতিরিক্ত ঘর্ষণের ফলে লিঙ্গের চামড়ায় স্থায়ীত্ব কমে যেতে পারে
- ত্বক পাতলা ও শুকনো হয়ে যেতে পারে
- লিঙ্গের রঙ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে শ্বেত বা ফ্যাকাশে দেখাতে পারে
➤ বাকা তেরা হয়
- অতিরিক্ত চাপ বা অনিয়মিত হস্তমৈথুনের কারণে লিঙ্গের আগা বাঁকা বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ আকৃতির হতে পারে
- এটি যৌন জীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে
➤ অতিরিক্ত করলে অল্পতেই বীর্যপাত হয় তাই দাম্পত্য জীবন সুখের হয় না
- দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা দেখা দেয়
- সহবাসে সন্তুষ্টি ও সময় কমে যায়
- স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের মান ও মনোযোগ কমে যেতে পারে
➤ অল্প বয়সে হস্তমৈথুনের সম্ভাব্য ঝুঁকি
অল্প বয়সে বা কিশোরাবস্থায় হস্তমৈথুনের অতিরিক্ত প্রবণতা কিছু ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
➤ যৌনতা নিয়ে অতিরিক্ত কৌতূহল ও বিকারগ্রস্ততা
- কম বয়সে অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে যৌন বিষয়ে ভুল ধারণা ও কৌতূহল বাড়ে
- এটি বিকারগ্রস্ততা (Sexual Deviance) বা অস্বাভাবিক যৌন অভ্যাসের দিকে পরিচালিত করতে পারে
- ফলশ্রুতিতে ব্যক্তি সামাজিক ও শারীরিক জীবনে সমস্যায় পড়তে পারেন
📌 উদাহরণ:
যে কিশোর নিয়মিত এবং অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করে, তার মাঝে কখনো কখনো পর্নোগ্রাফি বা অস্বাভাবিক যৌন চাহিদার প্রবণতা দেখা দিতে পারে, যা মানসিক ও সামাজিক সমস্যা ডেকে আনে।
➤ ইসলাম ধর্মে হস্তমৈথুন
ইসলামে হস্তমৈথুনকে কেমন দেখা হয় এবং এর ওপর কী ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি প্রচলিত আছে তা মূলত কুরআন, হাদীস ও ইসলামী স্কলারদের ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায়।
➤ পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে
- কুরআনে সরাসরি হস্তমৈথুনের উল্লেখ নেই। তবে পবিত্র কুরআনে ও হাদীসে যৌন জীবনের নিয়ম-কানুন ও নৈতিকতা সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে।
- অধিকাংশ আলেমের মতে, যৌন চাহিদা পূরণের জন্য বৈধ উপায় হলো বিবাহ।
- কিছু হাদীসে দোষবোধহীন উপায়ে যৌন উত্তেজনা কমানোর জন্য বিবাহবহির্ভূত পথ যেমন বিয়োজনকরণ বা আত্মতৃপ্তি নিয়েও নির্দেশনা পাওয়া যায়।
- তবে অনেক স্কলার হস্তমৈথুনকে নিন্দনীয় বা পাপ হিসেবে দেখেন, কারণ এটি বৈধ যৌন সম্পর্কের বাইরে।
➤ ইসলামী স্কলারদের ভিন্ন ভিন্ন মতামত
- কেউ মনে করেন, হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকা উচিত এবং তা পাপ।
- আবার কেউ বিবাহের অনুপস্থিতিতে উত্তেজনা কমানোর উপায় হিসেবে সীমাবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত হস্তমৈথুনকে মেনে নেন।
- অধিকাংশই সম্মত যে, যদি হস্তমৈথুনে আসক্তি বা ক্ষতিকর প্রভাব হয়, তবে তা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
- ইসলামী আইন ও সমাজে হস্তমৈথুন নিয়ে ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও, সকলেই যৌন নৈতিকতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
✦ চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুন
চিকিৎসা বিজ্ঞান হস্তমৈথুনকে একটি স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর যৌন আচরণ হিসেবে বিবেচনা করে। তবে এটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও সীমাবদ্ধতা জানা জরুরি, বিশেষ করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
➤ ডাক্তারদের দৃষ্টিকোণ থেকে গাইডলাইন
- অধিকাংশ চিকিৎসক মনে করেন, পরিমিত পরিমাণে হস্তমৈথুন স্বাভাবিক এবং শরীর-মন সুস্থ রাখে।
- এটি যৌন উত্তেজনা কমানো, মানসিক চাপ দূর করা এবং শরীরের স্বাভাবিক ফাংশন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- তবে অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করলে শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং মানসিক চাপ বাড়তে পারে, তাই ব্যালান্স রাখা জরুরি।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, যদি হস্তমৈথুনে কোনো সমস্যা বা অস্বস্তি দেখা দেয়, তখন চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
➤ কখন একজনকে ডাক্তার দেখাতে হবে
নিচের লক্ষণগুলোর ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে—
- হস্তমৈথুনের পর তীব্র ব্যথা বা ইনফেকশন দেখা দিলে
- অতিরিক্ত বার হস্তমৈথুনের কারণে দৈনন্দিন কাজ বা সামাজিক জীবন ব্যাহত হলে
- অস্বাভাবিক বীর্যপাত বা যৌনাঙ্গে জ্বালা, ফোস্কা বা চামড়ার সমস্যা হলে
- মানসিক চাপ, গিল্ট অনুভূতি বা আসক্তির লক্ষণ দেখা দিলে
- যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হলে
➤ কিশোর-কিশোরীদের সেক্স এডুকেশন ও হস্তমৈথুন
- কিশোর বয়সে হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক যৌন অনুসন্ধান। সঠিক সেক্স এডুকেশন (Sex Education) এর মাধ্যমে তাদের এই বিষয় সম্পর্কে সচেতন ও উদ্বিগ্নতা কমানো যায়।
- পরিবার, স্কুল ও চিকিৎসকদের উচিত সঠিক ও বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষিত করা যাতে তারা ভ্রান্ত ধারণা থেকে দূরে থাকে।
- সেক্স এডুকেশনে হস্তমৈথুনকে একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হিসেবে উপস্থাপন করা হলে, তারা আত্মবিশ্বাসী ও নিরাপদ মনে করবে।
- এছাড়া, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে পরিমিত হস্তমৈথুনের গুরুত্ব বোঝানো জরুরি।
উপসংহার
হস্তমৈথুন এর যত ভালো দিকই দেখুন না কেন এটা শারীরের জন্য অত্যান্ত ভয়ংকর, যা আপনার দাম্পত্য জীবনকে বিষণ্ণ করতে পারে। এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ি এটা ফাহেশা কাজ যা হারাম। আর এর কিছু ভালো দিক থাকলেও হারামে প্রবেশ করা যাবে না।